গাজীপুরে ৭১৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার
পাঁচ দিন বাদেই ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে যাঁরা জীবন দিয়েছিলেন, তাঁদের এদিন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারগুলোতে। কিন্তু গাজীপুরের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার। ফলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ জাতীয় দিবসগুলোতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর জন্য নেই কোনো স্থান।
এসব দিবসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটিতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। আর কোনো কোনোটিতে তা–ও করা হয় না। অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফুল দিতে যেতে হয় দূরের কোনো শহীদ মিনারে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন জানান, গাজীপুর জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকার ৭৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪১৭টিতেই শহীদ মিনার নেই। এ ছাড়া মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনগুলোর সিংহভাগেই নেই কোনো শহীদ মিনার। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা জানান, জেলার ৪৭টি কলেজের ১৫টিতে, ৩৫২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১১৩টিতে এবং ১৭৮টি মাদ্রাসার মধ্যে ১৬৮টিতেই কোনো শহীদ মিনার নেই। ফলে শিক্ষা অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলার ১ হাজার ৩৫২টি প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদ্রাসার মধ্যে ৭১৩টিতেই কোনো শহীদ মিনার নেই।
তবে এই হিসাবের বাইরে এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক শিক্ষালয়, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনগুলো না থাকায় বাস্তবে শহীদ মিনার না থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়াতে পারে। জেলা প্রাথমিক ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গাজীপুরে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে ১৬৭টি, এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক শিক্ষালয় ৩৪৪টি ও কিন্ডারগার্টেন রয়েছে ২ হাজার ৪০৬টি।
শহরের জয়দেবপুর দারুছ ছালাম ফাজিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালে। সেখানে কোনো শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। অধ্যক্ষ মো. আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে জানান, তহবিলের অভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। তবে মাদ্রাসাশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) নির্দেশনা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তাঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজস্বভাবে কর্মসূচি হয়। ২১ ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা প্রভাতফেরি নিয়ে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যায় এবং শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
গাজীপুর সিটির ছোট দেওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফা আক্তার ও আনহা আক্তার জানায়, তাদের স্কুলে যদি একটি শহীদ মিনার থাকত, তাহলে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে দূরে যেতে হতো না। ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক মাজেদা বেগম জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে কোনো সরকারি বরাদ্দ নেই। তবে স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর কমিটি কিংবা জেলা পরিষদের উদ্যোগে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।