তামাবিলে করোনা শনাক্তে সতর্কাবস্থা

ডিজিটাল থার্মোমিটার দিয়ে নেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে আসা যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা। গতকাল সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল স্থলবন্দর চেকপোস্টে।  ছবি: প্রথম আলো
ডিজিটাল থার্মোমিটার দিয়ে নেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে আসা যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা। গতকাল সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল স্থলবন্দর চেকপোস্টে। ছবি: প্রথম আলো

ভারতে কত দিন ছিলেন, কোন কোন এলাকায় গিয়েছিলেন, সম্প্রতি চীন ভ্রমণ করেছেন কি না, শরীরে জ্বর, গলাব্যথা আছে কি না—এমন সব প্রশ্নের মাধ্যমে সিলেটের গোয়াইনঘাটের তামাবিল স্থল বন্দর দিয়ে আসা ব্যক্তিরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রশ্ন শেষে ডিজিটাল থার্মোমিটার (নন কনটাক্ট থার্মোমিটার) দিয়ে দেখে নেওয়া হচ্ছে আগমনকারীর শরীরের তাপমাত্রা।

গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল স্থলবন্দরে অবস্থান করে এমন চিত্রই দেখা গেছে। বন্দরে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের এসব প্রশ্ন করছিলেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত চিকিৎসা দলের সদস্য, গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স সুশান্ত কুমার দেব। সঙ্গে ছিলেন উত্তম কুমার দেব নামের আরও এক স্বাস্থ্যকর্মী। প্রশ্ন শেষ হলে মেপে দেখছিলেন শরীরের তাপমাত্রা। পরে নাম ও ঠিকানা এবং শরীরের তাপমাত্রা নিবন্ধন করে রাখা হচ্ছিল। সে সঙ্গে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের পাসপোর্টগুলোও পর্যবেক্ষণ করছিলেন তাঁরা। 

গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে গত ২৮ জানুয়ারি থেকে তামাবিল স্থলবন্দরে এ ক্যাম্প চালু হয়। চীনে ‘করোনাভাইরাস’ ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশের অভিবাসন কেন্দ্রগুলোতে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়। গত ২৮ জানুয়ারি থেকে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দুই পালায় তামাবিল স্থলবন্দরে জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্সের মাধ্যমে এ ক্যাম্প পরিচালিত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্যাম্পে তামাবিল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ৬৫০ জনের শরীরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে নাম ও ঠিকানা নিবন্ধন করে রাখা হয়েছে। তবে এঁদের কারওর মধ্যেই করোনাভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গ লক্ষ করা যায়নি। 

গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, তামাবিল স্থল শুল্ক স্টেশনের পাশে একটি কক্ষের সামনে টেবিল এবং দুটি চেয়ার পেতে পরিচালিত হচ্ছে মেডিকেল ক্যাম্প। শুল্ক স্টেশনে প্রবেশের আগেই ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা মানুষজনের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্থলবন্দর হয়ে ১১ জন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তাঁদের প্রত্যেককে স্বাস্থ্যকর্মীরা শরীরের তাপমাত্রা মেপেছেন এবং বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। 

ভারতের শিলংয়ে তিন দিন থেকে সুমন চন্দ্র দে নামের এক ব্যক্তি গতকাল এই স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরেছেন। সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমন বলেন, ‘করোনাভাইরাস যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এটি ভালো উদ্যোগ। ক্যাম্প বসানোর ফলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে। সে সঙ্গে নিজে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না সে বিষয়েও জানা যাবে।’

গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স সুশান্ত কুমার দেব বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের উপসর্গ কিংবা লক্ষণ রয়েছে এমন কোনো ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। মেডিকেল ক্যাম্প ছাড়াও তাঁদের ‘র‌্যাপিড রেসপন্স টিম’ রয়েছে। যাত্রীর সংখ্যা বেশি হলে তাৎক্ষণিক তাদের সহায়তা নেওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ক্যাম্প বসানো হলেও সিলেটের সিভিল সার্জন এটি নিয়ন্ত্রণ করেন। শরীরে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে নন কনটাক্ট থার্মোমিটার দিয়ে। এটি ঢাকা থেকে পাঠানো হয়েছে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ এবং লক্ষণ পাওয়া গেলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশনা রয়েছে। 

এ বিষয়ে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় জানান, সিলেটে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে আট শয্যাবিশিষ্ট আইসোলেশন ইউনিট চালু করা হয়েছে।