বিদ্যালয় ধসে পড়ার শঙ্কা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের শেরেবাংলা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে গভীর নলকূপের পাইপ দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবারও দ্বিতীয় দিনের মতো প্রবল বেগে গ্যাস বেরোনো অব্যাহত ছিল।
ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি ধসে পড়েছে। বিদ্যালয়ের একটি ভবনও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে কসবার সালদা গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠে ৫৫০ ফুট গভীর একটি নলকূপ খননের কাজ শেষ হয়। এরপর পাইপ তোলার সময় কাদামাটি, গ্যাস ও পানি প্রচণ্ড শব্দে বেরোতে থাকে। গ্যাস বেরোনোর গতি খুবই বেশি। তা বন্ধ করা যাবে না। গ্যাস সংযুক্ত পানি ও মাটি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের লোকজন কাজ করছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে ৭২ ঘণ্টার আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বায়েক ইউনিয়নের সালদা গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে রয়েছে অষ্টজংগল এলাকায় শেরেবাংলা উচ্চবিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের মাঠে সরকারিভাবে একটি গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে। কাজ শেষ পর্যায়ে। নলকূপের পাইপ দিয়ে বুধবার সকাল থেকে দ্রুতগতিতে গ্যাস বের হচ্ছে। এতে বালু, গ্যাস ও পানির সংমিশ্রণ রয়েছে। কোনোভাবে গ্যাস বের হওয়া বন্ধ করা যাচ্ছে না। দ্বিতীয় দিনও গ্যাস বেরোচ্ছে।
প্রচণ্ড বেগে গ্যাস, বালু ও পানি ওঠায় একটি ভবন অর্ধেক বালুর নিচে চলে যাচ্ছে, আরেকটি ভবন ঝাঁকুনিতে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গ্যাস ওঠার জায়গায় গর্ত বড় হয়ে তলিয়ে গেছে বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারটি। বালু ও পানিতে বিদ্যালয়ের মাঠ একাকার হয়ে গেছে। এর চারদিকে লাল পতাকা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশেই অবস্থিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এদিকে বুধবার রাতেই পেট্রোবাংলা থেকে চার সদস্যের একটি টেকনিক্যাল দল এসেছে।
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার ভূঁইয়া। তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নারী সদস্য নাছিমা আক্তার বলেন, ‘এখানে আরও একটি গ্যাসক্ষেত্রের সম্ভাবনা রয়েছে। আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুরোধ করব যেন দ্রুতগতিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বায়েক ইউপির চেয়ারম্যান মো. আল-মামুন ভূঁইয়া বলেন, বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি ভেঙে মাটির নিচে তলিয়ে গেছে। এভাবে প্রবল বেগে গ্যাস, পানি ও বালু বের হতে থাকলে ভবনটিও ভেঙে পড়বে।
স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ ঘটনা শুনে আশপাশের এলাকার শত শত নারী-পুরুষ বিদ্যালয়ের ফটকের বাইরে ভিড় করছেন। সেখান থেকে এ দৃশ্য দেখছেন। গ্যাস থেকে আগুন ধরে যায় কি না, এ নিয়ে সবাই আতঙ্কিত।
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, স্কুলের মাঠে গভীর নলকূপটি দিয়ে প্রবল বেগে গ্যাস হচ্ছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনেও বন্ধ হয়নি। বিদ্যালয়ের একটি ভবন ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। ওই ভবনের আসবাব সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে বন্ধ এবং পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ আইনমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।
গতকাল মুঠোফোনে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠে দ্রুতগতিতে গ্যাস বের হওয়ার বিষয়টি নিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে কয়েক দফা কথা হয়েছে। তাঁদের লোকজন মাটি ও পানি পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ওপরের স্তরের গ্যাসটি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসতে পারে। মন্ত্রী আরও বলেন, পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলন করা যাবে কি না, তা–ও পরীক্ষা করা হবে। তা ছাড়া দ্রুতগতিতে গ্যাস বের হওয়ার কারণে যে ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ এ জন্য ক্ষতিপূরণ দেবে।