যক্ষ্মায় দিনে ১২৯ জনের মৃত্যু
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে দৈনিক ১২৯ জন মারা যাচ্ছে যক্ষ্মায়। যক্ষ্মা শনাক্ত করার আধুনিক যন্ত্র দেশে কম। প্রয়োজনীয় জনবল ও সম্পদেরও ঘাটতি ব্যাপক।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে আয়োজিত ‘যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তাঁরা এসব কথা বলেন। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, ব্র্যাক এবং ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। এতে যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞ, সরকারি কর্মকর্তা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, জাদুকর, অভিনেতা-অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী, দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল উপস্থাপনায় জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মেডিকেল কর্মকর্তা নাজিস আরেফিন দেশের যক্ষ্মা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, প্রতিদিন ৯৭৮ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। প্রতিদিন ১৬ জন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার শিকার হচ্ছে। আর দৈনিক মারা যাচ্ছে ১২৯ জন।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির নানা অগ্রগতি তুলে ধরে এই মেডিকেল কর্মকর্তা বলেন, যক্ষ্মার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জনবলের কমতি আছে। সঠিকভাবে কাজ করার জন্য যে পরিমাণ অর্থ দরকার তা নেই। জনসচেতনতার কাজে নাগরিক সমাজ ও কমিউনিটিকে যুক্ত করা যাচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানমতো ওষুধ দেশে তৈরি করার সমস্যা আছে।
কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, একটা সময় ছিল যখন কোনো বাড়িতে কারও যক্ষ্মা হয়েছে এটা জানলে ওই বাড়ির আশপাশে কেউ যেত না। সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। তবে এখনো মানুষের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি আছে। জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ বলেন, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, যক্ষ্মা শনাক্ত করার আধুনিক জিনএক্সপার্ট যন্ত্র দরকার ১ হাজার ২০০টি। এখন সারা দেশে চালু আছে ২২১টি। এ বছরের শেষ নাগাদ এই সংখ্যা ৪০০ হবে। যে বাজেট বরাদ্দ আছে, তাতে ২০২৩ সালে এ যন্ত্রের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭০০টিতে। তারপরও ৫০০ যন্ত্রের ঘাটতি থাকবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এম এ ফয়েজ বলেন, শুধু চিকিৎসা ও চিকিৎসকের দ্বারা যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। সামাজিক বিষয়গুলোতে জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, যক্ষ্মাসম্পর্কিত মানসম্পন্ন তথ্য-উপাত্ত খুবই জরুরি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান বলেন, স্বাস্থ্য খাতের নীতিনির্ধারকেরা চিকিৎসক পদায়ন ও মেডিকেল কলেজ তৈরির মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান খোঁজেন। তাঁদের কাছে নার্স বা টেকনিশিয়ানরা গুরুত্ব পান না। অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনেক অর্থের অপচয় হয় প্রশিক্ষণ ও কেনাকাটার নামে।
ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক মো. আকরামুল ইসলাম বলেন, জনসচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি জনবল বাড়াতে হবে।
সবশেষে কর্মসূচির সাফল্য তুলে ধরেন কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক শামিউল ইসলাম বলেন, যক্ষ্মার পরীক্ষা ও চিকিৎসা একেবারে বিনা মূল্যে করা হয়—এই বার্তা সবার কাছে পৌঁছানো দরকার।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন অধ্যাপক শাকিল আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল ইসলাম বুলবুল, গাজী টিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, অভিনেত্রী ত্রপা মজুমদার, সুমাইয়া সুমি, নাট্য পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী প্রমুখ।