মাস্ক ব্যবহার বেড়েছে, সঙ্গে দামও
চার বছরের মাহতাব হোসেন মাস্ক পরে বাবার কোলে চড়েছে। বাবা মাজহার হোসেনেরও নাকমুখ মাস্কে ঢাকা। নিউমার্কেটের সামনের ফুটপাত ধরে হাঁটছিলেন তিনি। ছেলে অস্বস্তি বোধ করছিল নকমুখ ঢাকতে। কিন্তু বাবা সতর্ক, ছেলে যেন মাস্ক খুলতে না পারে, সে জন্য হাত দিয়ে আটকে রেখেছেন।
একটি বেসরকারি কোম্পানির চাকরিজীবী মাজহার হোসেন বলেন, ‘বাতাসে ধুলোবালির জন্য আমি আগেও বাইরে বের হলে অধিকাংশ সময়ই মাস্ক পরেই চলাফেরা করতাম। তবে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে সুরক্ষার জন্য নিয়মিতই মাস্ক ব্যবহার করছি। পরিবারের সবার জন্যও মাস্ক কিনেছি।’
চীন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে। হাঁচি-কাশিতে ছড়ানো ছোঁয়াচে এ রোগটি থেকে সুরক্ষা পেতে দেশে মাস্ক ব্যবহার বেড়েছে। ফলে বাজারে মাস্কের দামও বেড়েছে, সঙ্গে সংকটও তৈরি হয়েছে।
গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অনেক শিক্ষার্থীকে মাস্ক পরে চলাফেরা করতে দেখা যায়। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম আহমেদ বলেন, ‘কিছুটা শ্বাসকষ্ট থাকায় মাস্ক পরলে সমস্যা হতো, তাই ব্যবহার করতাম না। করোনাভাইরাসের কারণে এখন সমস্যা হলেও পরার চেষ্টা করি।’ তিনি বিজয় ৭১ হলে থাকেন। সেখানেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার বেড়েছে বলে তিনি জানান।
নিউমার্কেটের একটি দোকানি সিফাতুল ইসলাম তাঁর দোকানের ভেতর মাস্ক পরে ছিলেন। তিনি বলেন, দোকানে অনেক ক্রেতা আসেন। কে কখন ভাইরাসটি নিয়ে আসেন ঠিক নেই। সেই আশঙ্কা থেকেই ইদানীং মাস্ক পরে থাকেন।
অনেকে আবার ভাইরাসটি সম্পর্কে না জেনেও মাস্ক পরেছেন। চানখাঁরপুল এলাকার বাসিন্দা শাহানা আক্তার বলেন, ‘আগে ধুলা থেকে বাঁচতে মাঝেমধ্যে মাস্ক পরতাম। তবে এখন কী ভাইরাস যেন আসছে, সেটার জন্য নাকি মাস্ক পরে থাকতে হয়। তাই পরেছি।’
করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত উদ্বেগে বাজারে মাস্কের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের বুলবুল ফার্মেসি, লাজ ফার্মা, শরীয়তপুর ফার্মাসহ বিভিন্ন ওষুধের দোকান ঘুরে দেখা যায়, আগে সার্জিক্যাল মাস্ক প্রতিটি ২০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হতো। এখন তা ৮০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। আর একবার ব্যবহারযোগ্য মাস্ক আগে প্রতিটি এক থেকে পাঁচ টাকা বিক্রি হতো, এখন তা পাঁচ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
>করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত উদ্বেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় মাস্কের ব্যবহার বেড়েছে। বাজারে সরবরাহ কম, দামও বেশি।
শাহবাগের বিএমএ ভবনের অধিকাংশ ওষুধের দোকানে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না। দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও দাম অনেক চড়া। ওষুধের দোকানি শরীফ আহমেদ জানান, আগে একবার ব্যবহারযোগ্য মাস্কের ৫০টির প্যাকেট পাইকারিতে কিনতেন ৮০ থেকে ১০০ টাকা করে। আর এখন এর দাম ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। তা–ও পাওয়া যায় না, ফলে খুচরা প্রতিটি ১৫ টাকার কমে বিক্রি করা যায় না।
যাত্রাবাড়ীর অভিরূপ ফার্মেসির বিক্রেতা দিপু বলেন, মাস্কগুলো চীন থেকে আসত। এখন চীন থেকে এই পণ্য আনা হয় না। আর বাংলাদেশে আরএফএল গ্রুপের গেট ওয়েল কোম্পানি মাস্ক তৈরি করে। তবে তাদের সরবরাহ কম।
এ বিষয়ে গেট ওয়েল কোম্পানির জনসংযোগ কর্মকর্তা জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা আমাদের নতুন প্রজেক্ট। নতুন হওয়ায় আমাদের সক্ষমতাও এখনো কম। হঠাৎ করে দেশের বাজারে মাস্কের এত সংকট দেখা যাবে তা আমরা জানতাম না। তবে আমরা আমাদের সক্ষমতার সবটা দিয়েই উৎপন্ন করছি।’
তবে গত ৩০ জানুয়ারি বিদেশে রপ্তানির জন্য মাস্ক বিক্রি বন্ধ করতে জরুরি নোটিশ দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবন দোকান মালিক সমিতি। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ফেস মাস্ক কোনো অবস্থায় মজুত এবং বেশি মূল্যে বিক্রি করা যাবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।