প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন। এসব সংগঠনের নেতারা বলছেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের পথ বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে এই কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে জনমনে যুক্তিসংগত আশঙ্কা আছে। তাঁরা আরও বলেছেন, এই মামলা যেন মতপ্রকাশ খর্ব করার অপচেষ্টা না হয়। গতকাল রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক বিবৃতিতে তাঁরা এসব কথা বলেন।
দ্রুততায় সন্দেহ সৃষ্টি: ওয়ার্কার্স পাটি
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো মনে করে, এই মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান না করে কেবল অভিযোগের ভিত্তিতে এত দ্রুততার সঙ্গে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা কিছুটা হলেও সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ওয়ার্কার্স পাটি সব সময় সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সপক্ষে থেকেছে। পার্টি আশা করে, এর মধ্য দিয়ে যেন সংবাদপত্রের মতপ্রকাশ খর্ব করার অপচেষ্টা না হয়। সেটা হলে তা হবে জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক। পার্টির পক্ষ থেকে দ্রুততার সঙ্গে এ মামলা নিষ্পত্তির আহ্বান জানানো হয়।
সরকারকে সতর্ক করেছে বাম জোট
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন, মামলাটি যেন একটি বেদনাদায়ক ঘটনার সুযোগ গ্রহণ, উদ্দেশ্যমূলক, পক্ষপাতদুষ্ট, হয়রানিমূলক না হয় এবং তা যেন স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করার সুযোগ হিসেবে কোনোভাবে ব্যবহৃত না হয়। জোটের পাঠানো এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক সাজ্জাদ জহির চন্দন।
সিপিবির নিন্দা
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম প্রথম আলো সম্পাদকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ ও স্বাধীন মতপ্রকাশের পথ বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে ভীতি প্রদর্শন, হয়রানি ও নাজেহাল করার কৌশল হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জনমনে যুক্তিসংগত আশঙ্কা রয়েছে। নেতারা এই পদক্ষেপ বন্ধ করার জন্য দাবি জানিয়েছেন।
আসকের গভীর উদ্বেগ
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ এক বিবৃতিতে বলেন, শিক্ষার্থী নাইমুল আবরারের মৃত্যু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং তা দেশের প্রতিটি মানুষকে মর্মাহত করেছে। তবে তার মৃত্যুর পরপরই সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও অন্যান্য মহল প্রথম আলো সম্পাদককে জড়িয়ে নানা মন্তব্য প্রদান করতে দেখা গেছে। তাঁদের মন্তব্যের পরেই প্রথম আলো সম্পাদকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
আসক মনে করে, এ ঘটনা বাক্স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে এবং জনমনে বিদ্যমান এই শঙ্কাকে আরও বেশি দৃঢ় করে তুলবে। এই ঘটনা–পরবর্তী সময়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বস্থানীয়দের দেওয়া বক্তব্য-বিবৃতি এই সংশয়কে আরও ঘনীভূত করেছে। কাউকে হয়রানি করার জন্য নয়, সত্যিকার অর্থে কর্তৃপক্ষের কোনো অবহেলার কারণে যদি এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, তা নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে আসক।
জেএসডির বিবৃতি
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব এবং সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন তালুকদার এক বিবৃতিতে বলেছেন, যেকোনো ইস্যুতে কণ্ঠরোধ, হস্তক্ষেপ বা ভীতির আবহ গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার সরকারি দক্ষতা এখন প্রশ্নাতীত। এ অবস্থায় যেভাবে প্রথম আলো সম্পাদকসহ অন্যদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে, তাতে সরকারে বিশুদ্ধ কর্তব্যবোধ প্রমাণিত হয় না। কর্তব্যকাজে ব্রতী হয়ে সরকার এ কাজ করেছে, তা দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির গভীর উদ্বেগ
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এক বিবৃতিতে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় এই গ্রেপ্তার আদেশ জারি করা হয়েছে, তাতে এই শঙ্কা ব্যক্ত করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে যে সমগ্র বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক ও পক্ষপাতদুষ্ট। তিনি বলেন, এই ঘটনা সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ, তার কণ্ঠরোধ এবং স্বাধীন চিন্তা ও মতপ্রকাশের অবশিষ্ট জায়গাটুকু আরও সীমিত করে দিচ্ছে কি না, সচেতন দেশবাসীর মধ্যে ইতিমধ্যে এসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নাগরিক পরিষদের প্রতিবাদ
নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন এক বিবৃতিতে বলেন, প্রথম আলো সাংবাদিকতার নীতি ও আদর্শ মেনে সংবাদপত্র পরিচালনার যে নজির চলমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সৃষ্টি করছে, তার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য সরকারের দীর্ঘ সময়ের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে এই হীন প্রচেষ্টা। এই অবস্থায় প্রথম আলো সম্পাদকসহ অন্যরা যাতে নিগৃহীত না হয়ে আইনের আশ্রয় পান, তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছে নাগরিক পরিষদ।
এ ছাড়া প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের নেত্রীরা।