প্রতিবন্ধীবান্ধব গণশৌচাগার সংকটে ভোগান্তি
কলেজছাত্রী জান্নাতুল নাঈমা সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। হুইলচেয়ারের সহায়তায় চলাফেরা করেন। প্রতিবন্ধীবান্ধব শৌচাগার পর্যাপ্ত না হওয়ায়, খুব প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে যান না। র্যাম্প ও শৌচাগারের সুবিধা না থাকায় কলেজও বদলাতে হয়েছে তাঁকে।
কয়েকজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, শহরের জনসমাগমস্থলে শৌচাগারের সংখ্যা কম। যেগুলো আছে, তার সব কটি প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়। এতে জান্নাতুল নাঈমার মতো প্রতিবন্ধীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রতিবন্ধী ৭ শতাংশের বেশি। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত জরিপ বলছে, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বতর্মানে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৮ জন।
ঢাকার দুই সিটিতে কমপক্ষে দেড় কোটি মানুষের বসবাস। অথচ শহরে আছে মাত্র ৬২টি গণশৌচাগার।
জান্নাতুল নাঈমার মা মাসুদা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধীবান্ধব শৌচাগার না থাকায় মেয়েকে কোথাও নিয়ে যাই না। নিয়ে গেলেও ভীষণ ঝক্কি পোহাতে হয়। আবার প্রতিবন্ধীবান্ধব শৌচাগার খুঁজলে অনেকে বিরক্তও হন।’
স্কুলছাত্রী নাজমা আক্তার বায়না ধরেছে বাণিজ্য মেলায় যাবে। প্রতিবন্ধীবান্ধব শৌচাগার সুবিধা পাবে না ভেবে, পরিবার মেয়েকে নিয়ে যেতে রাজি হয়নি। নাজমা প্রথম আলোকে বলে, ‘শৌচাগারে কমোড না থাকলে আমি ব্যবহার করতে পারি না। কিন্তু বেশির ভাগ জনসমাগমস্থলের শৌচাগারে এই ব্যবস্থা নেই। তাই বেড়াতে যেতে পারি না। জরুরি প্রয়োজনে যেতে হলে, মা আগে থেকেই পানি খাওয়া বন্ধ করে দেন।’ নাজমার মা শামসুন্নাহার বলেন, সরকার প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নানা কথা বললেও তাদের জীবনযাপন সহজ করতে জোর দেন না। এতে পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এ সম্পর্কে ওয়াটার এইড বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক রাজু বসাক প্রথম আলোকে বলেন, শৌচাগার তৈরির সময় অবশ্যই প্রতিবন্ধীদের কথা বিবেচনা করে নকশা করতে হবে। প্রতিবন্ধীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা রাখতে হবে। ওয়াটার এইড এ সুবিধা রেখেই শৌচাগার তৈরি করে। পুরোনো শৌচাগার প্রতিবন্ধীবান্ধব না হলেও শহরের নতুন শৌচাগারে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ইতিবাচক।
গত এক সপ্তাহে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বেশ কিছু গণশৌচাগার ঘুরে দেখা যায়, পুরোনো শৌচাগারগুলো প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়, বরং নোংরা ও ব্যবহারের অনুপযোগী। র্যাম্প ও কমোড নেই। তবে নতুন শৌচাগারগুলো প্রতিবন্ধীবান্ধব। যদিও এ তথ্য অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পরিবারের কাছে নেই।
ইন্দিরা রোডের গণশৌচাগারে কথা হয় ব্যবসায়ী মো. আহসান উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, পাঁচ বছর বয়সে গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর বাঁ পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর থেকে তাঁকে ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটতে হয়। ফার্মগেট এলাকায় কাজে এলে তিনি এই গণশৌচাগার ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, স্কুল, অফিস থেকে শুরু করে বেশির ভাগ জায়গায় প্রতিবন্ধীবান্ধব শৌচাগার নেই, তবে এখন অনেকে করছেন। কিন্তু শৌচাগার পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখার দিকে নজর দিতে হবে।
পান্থকুঞ্জের গণশৌচাগারে প্রতিবন্ধীদের ব্যবস্থা থাকলেও দেখা যায়, শৌচাগারের সামনে প্লাস্টিকের বেঞ্চ রাখা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শৌচাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. শাহীন বলেন, ‘এখানে বসে কিছু হিসাবনিকাশ করছিলাম। কিছুক্ষণ পরেই সরিয়ে নেব।’ তিনি আরও জানান, প্রতিবন্ধীরা খুব কম আসে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে এখন যে শৌচাগারগুলো তৈরি করা হচ্ছে, সবই প্রতিবন্ধীবান্ধব।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক বিন ইউসুফও বললেন একই ধরনের কথা।