দেড় কোটি মানুষের শহরে গণশৌচাগার মাত্র ৬২টি
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ড ১২৯টি। বসবাস করে কমপক্ষে দেড় কোটি মানুষ। অথচ শহরজুড়ে গণশৌচাগারের সংখ্যা মাত্র ৬২। এর মধ্যে নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে কোনো গণশৌচাগার নেই।
নগরবাসী বলছেন, ঘরের বাইরে গেলে গণশৌচাগারের সংকটের কারণে নানা সমস্যা পোহাতে হয়। পড়তে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। দীর্ঘক্ষণ প্রসাব আটকে রাখার কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হতে হয়। এর মূল ভুক্তভোগী নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী।
গত বুধবার দুপুরে ফার্মগেট এলাকায় কথা হয় আফরোজা বেগম ও তাঁর কলেজপড়ুয়া মেয়ে তানিয়া আক্তারের সঙ্গে। ক্লাস শেষে তাঁরা হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন। কখনোই গণশৌচাগার ব্যবহার করেননি বলে জানান গৃহিণী আফরোজা বেগম। তিনি বলেন, ‘বাইরে বের হওয়ার কথা থাকলে আগে থেকেই পানি কম খাই।’ তাঁর মেয়ে তানিয়া অবশ্য দু-একবার গণশৌচাগার ব্যবহার করেছেন। তবে তাঁর অভিজ্ঞতা ভালো নয়।
শহরে শৌচাগারের সংকট গুরুতর বলে মন্তব্য করে স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেন, নগরের বেশির ভাগ মানুষ কাজের জন্য দীর্ঘ সময় বাইরে থাকেন। ৮০ শতাংশ মানুষ হেঁটে চলাচল করে। অথচ শহরের হাঁটার পথে গণশৌচাগার নেই বললেই চলে। তিনি আরও বলেন, এই শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা অনুযায়ী কমপক্ষে ১ হাজার আধুনিক গণশৌচাগার দরকার।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) মোট ওয়ার্ড আছে ৭৫টি। এর মধ্যে ১৮টি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে ২০১৭ সালে। ১০৯ দশমিক ২৫১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই সিটি করপোরেশনে গণশৌচাগার আছে মাত্র ৩৭টি। এর মধ্যে ২৯টি নতুন ও পুরোনো ৮টি।
পুরান ঢাকার ওয়ারীতে বসবাস করেন রিজিয়া খান (৩২)। তিনি ছয় বছর ধরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিপণনকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। এ জন্য দিনের বেশির ভাগ সময় বাসার বাইরে থাকতে হয় তাঁকে। কিন্তু চলার পথে তিনি প্রায়ই গণশৌচাগার পান না। এ জন্য চাকরির শুরুর দিকে তাঁকে বেশ কয়েকবার প্রস্রাবের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। এখন তিনি বিপণিবিতান, হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় শৌচাগার ব্যবহারে করেন। রিজিয়া বলেন, এই শহরে নাগরিকদের তেমন কোনো সুবিধাই মেলে না। যানজট, ধুলাবালু, শব্দদূষণসহ নানান সমস্যা। শৌচাগারের মতো একটা দরকারি বিষয়ও অবহেলিত।
তবে ডিএসসিসিতে ‘নতুন পাবলিক টয়লেট ও বিদ্যমান পাবলিক টয়লেট উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের আওতায় মোট ৪৫টি আধুনিক গণশৌচাগার নির্মাণ ও ১৭টি পুরোনো গণশৌচাগার সংস্কার করা হবে। এর মধ্যে ২৯টি নতুন বাস্তবায়ন ও ৮টি সংস্কার করা হয়েছে। চলছে তিনটির কাজ।
ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, দক্ষিণ সিটিতে ৫২টি নতুন গণশৌচাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ২০-২৫টি নাগরিকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলে খুলে দেওয়া হবে। এ ছাড়া আরও গণশৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা আছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৪। এর মধ্যে নতুন ওয়ার্ড ১৮টি। ১৯৬ দশমিক ২২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই সিটি করপোরেশনে গণশৌচাগার আছে মাত্র ২৫টি।
পশ্চিম শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজারের পাশে একটি গণশৌচাগার আছে। শৌচাগার দুর্গন্ধে ভরা। ছিটকিনিও নষ্ট। ভেতরে পানির ব্যবস্থা নেই। খুব জরুরি না হলে বাজারের পুরুষ ব্যবসায়ীরাও শৌচাগারটি ব্যবহার করেন না। নারী ব্যবসায়ীরা প্রয়োজন হলে বাসায় যান। নাম না প্রকাশের শর্তে এক ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘টয়লেট না থাকায় বিরাট অসুবিধা। পুরুষ না হয় অন্য কোথাও গেল। মহিলারা কই যাবে?’
জানা গেছে, একটি প্রকল্পের আওতায় ঢাকা উত্তরে ৫৩টি গণশৌচাগার তৈরি করা হবে। কয়েকটি স্থানে কাজ চলছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক বিন ইউসুফ বলেন, জনসংখ্যা ও আয়তন বিবেচনায় নিলে আরও গণশৌচাগার দরকার। কিন্তু জায়গার সংকটের কারণে তৈরি করা যাচ্ছে না। তারপরও পার্কসহ যেখানে জায়গা পাওয়া যাচ্ছে, গণশৌচাগার তৈরি করা হচ্ছে।