ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বয়স্ক ও শিশুরা
>২৪ ঘণ্টায় সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে এসেছে। দুই মাসে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৭২টি শিশু নিউমোনিয়ায় মারা গেছে।
দেশে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশই ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে জন্ডিস, জ্বর, চোখ ও চর্ম সমস্যা নিয়েও অনেক রোগী হাসপাতালে যাচ্ছে।
এসব রোগে মূলত শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা মারা যাচ্ছেন। তবে শিশুরা মূলত নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়েই মারা যাচ্ছে। মৃত শিশুদের ৯০ শতাংশের বেশির বয়স পাঁচ বছরের নিচে।
সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, গত ১ নভেম্বর থেকে চলতি ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট) ও ঠান্ডাজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার ১০ জন। এদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় প্রায় ২ হাজার, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে প্রায় ৮০০ ও অন্যান্য রোগে প্রায় ৩ হাজার রোগী হাসপাতালে এসেছে। অন্যান্য অসুস্থতার মধ্যে আছে জন্ডিস, আমাশয়, জ্বর, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ।
এ বিষয়ে কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত জানুয়ারিতে ঠান্ডাজনিত রোগী কমে আসে। কিন্তু এবার শীতের প্রকোপ বেশি থাকায় এবং বৃষ্টির কারণে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় সরকারি হাসপাতালে নির্দেশনা দেওয়া আছে। আবার জনগণকে সচেতন করতেও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইসহাক উদ্দিন নামে ৪০ বছরের এক ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে আসেন। তিনি তিন দিন ধরে ঠান্ডা, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। আবার শিশু ওয়ার্ডে জাকারিয়া নামে আট মাসের এক শিশুকে কোলে নিয়ে বসে আছেন মা। শিশুটির হাতে ক্যানোলা। এই মা বলেন, ২৭ দিন ধরে শিশুটি অসুস্থ। শুরুতে ডায়রিয়ার সমস্যা ছিল। সেটা কমে এখন নিউমোনিয়ার সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই শিশু ওয়ার্ডে বর্তমানে ৫৭ শিশু ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের অ্যাজমা সেন্টার খোলা থাকে সকাল সাড়ে আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। সেখানে দুপুরের দিকেও রোগীদের বেশ ভিড় ছিল।
অ্যাজমা সেন্টারের প্রধান মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এখন শিশুরা মূলত নিউমোনিয়া ও ব্রংকাইটিসের সমস্যা নিয়ে আসছে। আগের তুলনায় বর্তমানে রোগী দ্বিগুণের কাছাকাছি। আগে গড়ে দিনে ৪০ রোগী আসত।
কামরুজ্জামান আরও বলেন, বাইরের দূষণের (ধোঁয়া, ধুলা, ফুলের রেণু) পাশাপাশি ঘরের ভেতরকার দূষণের কারণেও শিশুরা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে।
নিউমোনিয়াতেই শিশুরা মারা যাচ্ছে
ঢাকা শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই হাসপাতালে ভর্তি থেকে ৪০৭ শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের একটি বড় অংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এসেছে।
আবার এই সময়ে হাসপাতালটিতে কেবল নিউমোনিয়াতেই আক্রান্ত হয়ে ৭২ শিশু মারা গেছে। মৃতদের বয়স বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মৃত শিশুদের ৯২ শতাংশের বয়স ৫ বছরের কম অর্থাৎ ৬৬ শিশু এই বয়সী। তবে নবজাতকের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। সরকারের হিসাবে অবশ্য এই সময়ে ১৭ শিশু মারা গেছে। তারাও সবাই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল এবং সব শিশুর বয়স ৫ বছরের কম।
৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া উল্লেখ করে ঢাকা শিশু হাসপাতালের রোগতত্ত্ববিদ কিংকর ঘোষ বলেন, শীতে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ে। ফলে মৃত্যুও বাড়ে। এর মূল ঝুঁকি কম বয়সী শিশুদের। তবে এর মূলে রয়েছে অপুষ্টি। অপুষ্টির কারণে শিশুরা কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়, সহজেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।