'মনে হচ্ছে মেরে ফেলারই পরিকল্পনা করছে'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক বলেছেন, গতকাল রোববারের হামলার পরিস্থিতি আগে কখনো দেখেননি। তিনি বলেন, ‘বড় পর্যায়ের নেতারা সরাসরি হামলা করেছে। এই পরিস্থিতি আগে কখনো হয়নি। মনে হচ্ছে মেরে ফেলারই পরিকল্পনা করছে।’
গতকাল রোববার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুরুল হক প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সরাসরি আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কয়েকজন সহসভাপতিও খুব মারমুখী ছিলেন। আগে নিচু পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা মারধর করত। এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি।’
ছাত্রলীগের উদ্দেশে ভিপি নুরুল আরও অভিযোগ করেন, ‘ওরা রুমে তিনবার গেছে পেটানোর জন্য। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি আহত হইনি ততক্ষণ হামলা চলেছে।’
হামলার কারণ জানতে চাইলে নুরুল বলেন, ১৭ ডিসেম্বর তাঁরা ভারতের নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিক পঞ্জির প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করেন। ওই দিনই কিছু ঝামেলা হয়। ১৮ ডিসেম্বরও হামলা হয়। এসবের জের ধরে গতকাল হামলা হয়েছে।
নুরুলের ভাষ্য, ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের একজন ছেলে তাঁকে ফোন দিয়ে বলেন, তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নুরুল প্রথম টার্গেট। তাঁর যেন অন্তত হাত পা ভেঙে দেওয়া হয়। নুরুল বলেন, গতকাল কক্ষে টেবিল না থাকলে তাঁর অবস্থা আরও গুরুতর হয়ে যেত। টেবিলের নিচে মাথা রাখায় তিনি গুরুতর আহত হননি।
নুরুল হক আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তাঁরা পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি, লুটপাটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। এসব সময়ে তাঁদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেনি। নাগরিকত্ব আইন সিএএ ও এনআরসি নিয়ে প্রতিবাদ করার কারণে তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নাগরিকত্ব ও এনআরসি নিয়ে ১৭ তারিখে যে কর্মসূচি ছিল, তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন। তিনি নুরুলকে বলেছিলেন, ‘এনআরসি নিয়ে কথা বলার কী প্রয়োজন। এটা বড়দের বিষয়। এ বিষয়ে আপনি কথা বলবেন না।’
কেন বারবার হামলা হচ্ছে? জানতে চাইলে প্রথম আলোকে নুরুল বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে দলগুলো কোণঠাসা। আমরা কোনো রাজনৈতিক দল না। আমাদের কোনো মাদার অর্গানাইজেশন নাই। সরকার আমাদের বড় শক্তি বলে মনে করছে, যাদের ছাত্রদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা আছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মুখ বুজে থাকে। সেখানে আমরা এখন কথা বলছি।’
নুরুল আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো এসব বিষয় নিয়ে কথা বললেও জনগণ তাঁদের ওপর আস্থা রাখে না। ভাবে, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। কিন্তু আমাদের সে রকম কোনো উদ্দেশ্য নাই। সে কারণে আমাদের কথা মানুষ বিশ্বাস করেছে।’
এতবার হামলার শিকার হয়েছেন মামলা করেছেন কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে নুরুল বলেন, ১৮ ডিসেম্বরের হামলার পর শাহবাগ থানায় গিয়েছিলাম মামলা করতে । পুলিশ তাঁকে অভিযোগ দিয়ে যেতে বলেছে। এর আগে বগুড়ায় যখন হামলা শিকার হন তখন স্থানীয় নেতারা মামলা করতে গিয়েছিলেন। মামলা নেওয়া হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলেও হামলার শিকার হয়েছেন। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু ব্যবস্থা নেয়নি।
নুরুল বলেন, ‘আমাদের পরিস্থিতি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, আমরা যদি গণভবনে যাই আমাদের কোনো দোষ নাই। কিন্তু গণফোরামের অনুষ্ঠানে গেলে আমাদের দোষ। আ স ম আব্দুর রবের সেমিনারে গেলে আমাদের দোষ। আওয়ামী লীগ ভাবছে শুধু তাঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক থাকবে। আর কারও সঙ্গে থাকবে না।’
ভবিষ্যৎ কী হবে? জানতে চাইলে নুরুল বলেন, ‘যতই হামলা হোক আমরা কথা বলে যাব। রাষ্ট্রের বিচারহীনতা, দুর্নীতি, লুটপাট, গণতন্ত্রহীনতা, নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলে যাব।’
নুরুল বলেন, ‘দলকানা ও লেজুড়বৃত্তি রাজনীতির কারণে ছাত্রসংগঠনগুলো এসব বিষয়ে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছে। আমরা কথা বলা শুরু করেছি। আমাদের কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম নেই। কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আমরা কাজ করব না। আমরা সব পক্ষেরই সমালোচনা করে যাব।’