যেভাবে সম্পদশালী হলেন তিনি
তাঁর আয়ের অন্য কোনো উৎস নেই। ১৫ বছর চাকরি করে বেতন পেয়েছেন প্রায় সাড়ে ২২ লাখ টাকা। ওই টাকার ৮০ ভাগ পারিবারিক ব্যয় বাদ দিলে থাকার কথা সাড়ে ৪ লাখ টাকা। কিন্তু তিনি স্থাবর–অস্থাবর ৬৯ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। তাঁর নাম জয়নাল আবেদীন। তিনি নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয় চট্টগ্রামের এক অফিস সহায়ক। তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
জয়নাল বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। গত আগস্টে লাকী আক্তার নামের এক নারীর ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার ঘটনায় ধরা পড়েন। এরপর জয়নালসহ ইসির স্থায়ী অস্থায়ীসহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনায় করা মামলা তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সিআইডি ও দুদক। গ্রেপ্তারের পর জয়নাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার করার কথা জানিয়েছেন।
দুদক সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের ১ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন কার্যালয় চট্টগ্রামে এমএলএসএস পদে যোগদান করেন জয়নাল। তখন মাসিক বেতন পেতেন ৫ হাজার ৯৬০ টাকা। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তিনি বেতন পেতেন ১৩ হাজার ৯০০ টাকা। চাকরি যোগদান থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত বেতন পান ২২ লাখ ৪৬ হাজার ৯০০ টাকা। ওই বেতনই জয়নালের একমাত্র আয়ের উৎস। তাঁর নামে কোনো আয়কর নথিও নেই। বেতনের ৮০ ভাগ পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ বাদ দিলে খরচ হয় ১৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫২০ টাকা। তাঁর কাছে থাকার কথা ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৩৮০ টাকা।
>ইসির অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার করতেন
আর এই টাকায় মালিক হয়েছেন বাড়ি ও জমির
কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে জয়নালের লাখ লাখ টাকার হদিস মেলে। গত বছরের ৩০ জুলাই জেলার বাঁশখালীর গ্রামের বাড়িতে সাড়ে ৫ লাখ টাকায় পাঁচ শতক নাল জমি কেনেন। ওই জমিতে পাঁচতলার ভিত্তি দিয়ে চারতলা তোলেন। এতে খরচ হয় ৬৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে আরেকটি জায়গা কেনেন। এভাবে জয়নালের স্থাবর–অস্থাবর ৭৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮২২ টাকার সম্পদের হদিস পায় দুদক। এর মধ্যে বেতনের সাড়ে ৪ লাখ টাকা বাদ দিলে ৬৯ লাখ ৭ হাজার ৪৪২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া যায় জয়নালের।
দুদক চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী প্রথম আলোকে বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৬৯ লাখ ৭ হাজার ৪৪২ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন ইসির অফিস সহায়ক জয়নাল।
এই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে সম্প্রতি মামলা করেছে দুদক। টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার করে জয়নাল এই সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদক অনুসন্ধানে এসব তথ্য পেলেও তাঁর নামে–বেনামে আরও সম্পদ থাকতে পারে। দুদকের তদন্তে তা বেরিয়ে আনার চেষ্টা রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রামের পরিদর্শক রাজেস বড়ুয়া জানান, জয়নালের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। রোহিঙ্গাদের ভোটার করেই তিনি সম্পদ অর্জন করেছেন।
দুদকের করা আরেক মামলায় জয়নালের স্ত্রী আনিছুর নাহার বেগমকে আসামি করেছে দুদক। জয়নাল কারাগারে থাকায় তাঁর স্ত্রী আনিছুর রহমানের বক্তব্য নিতে মুঠোফোনে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।