তাপমাত্রা কমছে, ১০ ডিগ্রির নিচে নামবে
সারা দেশে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। আরও দুদিন তাপমাত্রা কমতে থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসবে। আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চট্টগ্রামে তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে কমে ১৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে।
সিলেটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৪ থেকে নেমে আজ ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ময়মনসিংহে ১৪ দশমিক ৬ থেকে কমে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহীতে ১৪ দশমিক ৩ থেকে কমে ১১ দশমিক ৪, খুলনায় ১৭ দশমিক ৪ থেকে কমে ১৫, বরিশালে ১৫ থেকে নেমে আজ তাপমাত্রা হয়েছে ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকালের মতো আজও ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলের তাপমাত্রা কমে শীত অনুভূত হচ্ছে। আরও দু-তিন দিন তাপমাত্রা কমা অব্যাহত থাকবে। এ সময়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসতে পারে। তবে ঢাকায় তাপমাত্রা এই পরিমাণ কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। মূলত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, যশোর, চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা কমতে থাকবে।
দিনাজপুরে আজ বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। একই সঙ্গে বইছে মৃদু বাতাস। গতকাল সকালে সূর্যের তেজ ততটা ছিল না। বিকেলের দিকে সূর্যের তেজ কিছুটা বাড়ে। তবে আজ বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত সূর্য উঁকি দেয়নি। দুই দিন ধরে তাপমাত্রা কমছে জানিয়ে দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আজ দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে এ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে।
‘ঠান্ডা হান্ডিত আসি নাগে ’
আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সেখানে তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে চারদিক। শীতের সঙ্গে কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ–নদীর মধ্যবর্তী সাড়ে চার শ চরের প্রায় ৮ লাখ দরিদ্র মানুষ শীতে কষ্ট পাচ্ছে বেশি।
কুড়িগ্রাম আবহাওয়া দপ্তর জানায়, গত কয়েক দিন থেকে তাপমাত্রা নিচের দিকে নামছে। আরও নামতে পারে।
আজ সালে সকালে দুধকুমার নদের তীরবর্তী সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের চর রসুলপুরের কৃষক খলিলুর রহমান, আবদুল কাদের জানান, প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর চারদিক কুয়াশায় ঢেকে যায়। সারা রাত টপটপ করে কুয়াশা বৃষ্টি পড়ে। গ্রামের লোকজন খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে তাপ নিচ্ছে। কোনো কোনো কৃষক বৈরী অবস্থার মধ্যেও মাঠে কাজ করছেন। গবাদিপশুর গায়ে চট দিয়ে রাখা হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যবর্তী যাত্রাপুর ইউনিয়নের রলাকাটার বৃদ্ধ হনুফা বেওয়া বলেন, ‘ঠান্ডা সওয়া যায় না গো। হান্ডিত আসি নাগে। হামরা গরিব মানুষ গরম কাপড় নাই। শীত পার করি কেমন করি।’
কুড়িগ্রাম আবহাওয়া দপ্তরের পর্যবেক্ষক সুনীল কুমার জানান, গতকালের চেয়ে এখানে তাপমাত্রা আরও কমেছে। আজ তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। দিন দিন তাপমাত্রা আরও কমতে থাকবে। এ মাসের শেষের দিকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন জানান, দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য এখন পর্যন্ত জেলায় ৫১ হাজার ৫০০ কম্বল পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে তা নয় উপজেলা ও তিন পৌরসভায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সেখানে ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শ্রীমঙ্গলে ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন ধরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। দুই দিন ধরে দেখা যাচ্ছে ঘন কুয়াশা। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় সেদিক থেকে হিমেল বাতাস আসে। এ জন্য অন্যান্য জেলার চেয়ে অনেক আগেই শীত নামে পঞ্চগড়ে। এ ছাড়া অন্যান্য জেলার তুলনায় শীতের তীব্রতাও থাকে বেশি এবং এর স্থায়িত্বও থাকে বেশি দিন। এ মাসের শেষের দিকে দুই থেকে তিনটি মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে তিনি জানান।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, জেলার পাঁচটি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মাধ্যমে ২৮ হাজার কম্বল বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]