ভুয়া পরোয়ানার চক্করে আওলাদ, হাইকোর্টে স্ত্রী
একের পর এক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখিয়ে এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে এবং এক আদালত থেকে অন্য আদালতে হাজির করা হচ্ছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রোগ্রাম অফিসার আওলাদ হোসেনকে। এমন অভিযোগ তুলে তাঁকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি, তা নিশ্চিতে হাইকোর্টে হাজির করার জন্য নির্দেশনা চেয়ে রিট করেছেন আওলাদের স্ত্রী।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে কক্সবাজারের এক মামলায় গত ৩০ অক্টোবর আওলাদকে আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেদিন আওলাদকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হলে তাঁর জামিন চাওয়া হয়। ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আশুলিয়া) জামিন নামঞ্জুর করে নথিপত্র কক্সবাজারের আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন।
রিট আবেদনকারীপক্ষ জানায়, নথিপত্র কক্সবাজারের আদালতে পৌঁছার পর আওলাদের জামিন চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ নভেম্বর কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর দেওয়া আদেশে বলা হয়, ওই মামলায় আওলাদ নামে কোনো আসামি নেই। গ্রেপ্তারি পরোয়ানাটি ট্রাইব্যুনাল থেকে ইস্যু হয়নি। ওই পরোয়ানা সৃজন করা হয়েছে। তাঁকে (আওলাদ) মুক্তি দেওয়া হোক। কক্সবাজারের আদালতের দেওয়া আদেশ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। আদেশ পৌঁছার পর ঢাকা কারাগার থেকে জানানো হয়, নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে রাজশাহীর এক মামলায় (১৩৭/২০১৬) আওলাদকে রাজশাহীর আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে।
রিটের তথ্য অনুসারে, এরপর আওলাদকে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনাল গত ২৪ নভেম্বর আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এই ট্রাইব্যুনালের নয়, সার্বিক পর্যালোচনায় ওই মামলায় আওলাদ আসামি নন। তাঁকে অব্যাহতি ও মুক্তি দেওয়া হোক। এরপর ট্রাইব্যুনালের ওই আদেশ রাজশাহীর কারাগারে পৌঁছে। তখন জানানো হয়, বাগেরহাটের একটি সিআর মামলায় (২৪৫/১৭) আওলাদকে বাগেরহাটে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে আওলাদকে বাগেরহাট আদালতে হাজির করা হলে তাঁর জামিন চাওয়া হয়। ১ ডিসেম্বর বাগেরহাটের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে বলা হয়, হাজিরা পরোয়ানামূলে হাজির আওলাদ এই মামলায় আসামি নন। হাজিরা পরোয়ানাও এই আদালত কর্তৃক ইস্যু করা হয়নি। বিচারকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অস্তিত্বহীন স্মারক নম্বর ব্যবহার করে পরোয়ানাটি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। আদালতের ওই আদেশ বাগেরহাট কারাগারে পৌঁছে। তখন জানানো হয়, শেরপুরের একটি মামলায় (সিআর ১৫৯/১৮) আওলাদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী এমাদুল হক বশির আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, একের পর এক মামলা দেখিয়ে আওলাদকে এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে এবং এক আদালত থেকে অন্য আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, শেরপুরের মামলার নথিপত্র এখনো পাওয়া যায়নি। ২ ডিসেম্বর থেকে আওলাদ শেরপুর কারাগারে আছেন। ইতিমধ্যে তিনটি আদালতের আদেশে এসেছে আওলাদের বিরুদ্ধে দেখানো গ্রেপ্তারি ও হাজিরা পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট আদালত দেননি। এসব গ্রেপ্তারি ও হাজিরা পরোয়ানা ভুয়া। এ অবস্থায় তাঁকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি, তা নিশ্চিতে তাঁর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন ৮ ডিসেম্বর রিট আবেদনটি করেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে কাল মঙ্গলবার রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।