নতুন এটিএম কার্ড চালুর নামে প্রতারণা
সিলেটের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭২ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তৎপরতায় প্রায় এক মাসের মাথায় ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৪০ টাকা ফেরত পেয়েছেন ওই গ্রাহক। প্রতারণার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনের নাম-পরিচয় ও টাকা উত্তোলনের একটি ভিডিওচিত্র সংগ্রহ করেছে পিবিআই।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ডাচ্–বাংলা ব্যাংক সিলেট শাখার গ্রাহক। তাঁর নাম খাইরুন নেছা (নাম্মী)। এর বাইরে তিনি তাঁর বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নন। গত ৬ নভেম্বর রাতে প্রতারকেরা প্রতারণার মাধ্যমে তাঁর হিসাব থেকে টাকা সরিয়ে নেয়।
পিবিআই ও ব্যাংকের গ্রাহকের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত ৬ নভেম্বর রাত আটটার দিকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে খাইরুন নেছার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে ফোন আসে। অপর প্রান্ত থেকে নিজেকে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা কাজী মারুফ পরিচয় দিয়ে বলা হয়, তাঁর (খাইরুন নেছা) ব্যবহৃত ডাচ্–বাংলার এটিএম কার্ডটি বন্ধ হয়ে গেছে। সেটি পুনরায় চালু করে দৈনিক কার্ডটির মাধ্যমে ৫০ হাজারের স্থলে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত উত্তোলনের সুবিধা নিতে পারবেন। এ জন্য খাইরুন নেছার ব্যবহৃত মুঠোফোনে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস পে ওয়ালেট পুনরায় চালুর নম্বর বলতে বলেন। এরপরই খাইরুন নেছার হিসাব থেকে টাকা স্থানান্তর হতে থাকে। বিষয়টি খাইরুন নেছা পুনরায় কথিত ডাচ্–বাংলা ব্যাংক কর্মকর্তা কাজী মারুফকে মুঠোফোনে জানালে তিনি বলেন, নতুন কার্ডে ওই টাকাগুলো স্থানান্তর করা হচ্ছে। ওই সময় খাইরুন নেছার হিসাবে ৪ লাখ ৮০ হাজার ৩৭২ টাকা ছিল। পরদিন ৭ নভেম্বর খাইরুন নেছা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে নিজ হিসাবের তথ্য নেন। ব্যাংকের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, হিসেবে থাকা টাকাগুলো থেকে ৪ লাখ টাকা অনলাইন কেনাকাটা বাবদ এবং ৭৯ হাজার ৮৭২ টাকা ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং রকেটের একটি নম্বরে স্থানান্তর করা হয়েছে। ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং হিসাবের বিবরণ দেখে খাইরুন নেছা বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
এ ঘটনায় খাইরুন নেছা সিলেট আদালতে মামলা করেন। গত ১৭ নভেম্বর আদালতের বিচারক সিলেটের পিবিআইকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরই মাঠে নামে সিলেট পিবিআইয়ের একটি দল। তথ্যপ্রযুক্তি এবং ব্যাংকের মাধ্যমে জানতে পারেন, গ্রাহকের টাকাগুলো সেবা প্ল্যাটফর্ম লিমিটেড এবং এসএসএল ওয়ারলেস নামের দুটি প্রতিষ্ঠানে লেনদেন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগের পর জানা যায়, গ্রাহকের সেবা প্ল্যাটফর্ম নামের প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৪০ টাকা জমা রয়েছে। পরে গত মঙ্গলবার সেবা প্ল্যাটফর্ম থেকে টাকাগুলো গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে ফেরত দেওয়া হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই সিলেটের উপপরিদর্শক (এসআই) সুদীপ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনলাইনের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারের চক্রটির সন্ধান পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে আমরা চক্রটির পাঁচ সদস্যের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেছি। সেই সঙ্গে টাকা উত্তোলনের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেবা প্ল্যাটফর্ম লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি তৃতীয় পক্ষ। মামলায় আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আদালতের পরবর্তী নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা হবে।’
পিবিআই সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, সেবা প্ল্যাটফর্ম লিমিটেড একটি সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান। রাজ টেলিকম নামের একটি প্রতিষ্ঠান এর গ্রাহক। রাজ টেলিকমই প্রতারণার মধ্যমে টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেছে। তবে পিবিআইয়ের তৎপরতার কারণে পুরো অঙ্ক সরিয়ে নিতে পারেনি। তদন্ত প্রতিবেদন শিগগিরই আদালতে জমা দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের সিলেট আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক তাহমিদ বখত চৌধুরীর মুঠোফোনে দুই দফা ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।