খুনের পর কুপিয়ে কিছু মৃতদেহ বিকৃত করে জঙ্গিরা
আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) মতাদর্শে উজ্জীবিত হামলাকারীরা হোলি আর্টিজান বেকারিতে রেখে যায় ভয়ংকর নৃশংসতার ছাপ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে পাঁচ তরুণ হত্যা করে ২০ জনকে। গুলি করে হত্যার পর তারা মৃতদেহগুলোকে কোপাতে থাকে। রেস্তোরাঁর বাইরে থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ে হোলি আর্টিজান বেকারির লনে।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন সাতজন জাপানি, নয়জন ইতালীয়, একজন ভারতীয়, একজন দ্বৈত নাগরিক (বাংলাদেশি-আমেরিকান), দুজন বাংলাদেশি, দুই পুলিশ কর্মকর্তা, হোলি আর্টিজানের দুজন কর্মী ও হামলাকারী পাঁচজন। মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের ৪ জন চিকিৎসক ও তাঁদের ৫ জন সহকারী। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ৩ জুলাই সকাল ১০টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত হোলি বেকারিতে সে রাতে নিহত ২০ জনের ময়নাতদন্ত হয়।
নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্তে যুক্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ জানায়, হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর জিম্মিদের ৭ জনকে পেছন থেকে গুলি করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁদের মাথার পেছন থেকে গুলি ঢুকে সামনে থেকে বেরিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁরা মারা যান। কারও কারও মস্তিষ্ক থেঁতলে যায়। ময়নাতদন্তের সময় ক্ষতস্থান থেকে গুলি উদ্ধার করে চিকিৎসকেরা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
ওই সাতজনের ৪ জন ইতালির নাগরিক, ২ জন জাপানের ও ১ জন ভারতের নাগরিক তারিশি জৈন। সবচেয়ে বীভৎস কায়দায় হত্যা করা হয় ভারতীয় এই নাগরিককে। তারিশির দুই হাতসহ সারা দেহে চল্লিশটির মতো কোপ ও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল।
এর বাইরে ফারাজ আইয়াজ হোসেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক অবিন্তা কবিরসহ ১০ জনের ঘাড়ে ও গলায় ছিল চাপাতির কোপ। ফারাজের হাতেও ছিল ক্ষত। তাঁদের কারও কারও দেহে বোমার স্প্লিন্টারও পাওয়া যায়। বাংলাদেশি নাগরিক ইশরাত আখন্দ, ইতালীয় অন্তঃসত্ত্বা ১ জন নারী ও জাপানের ১ জন নাগরিকের মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। জাপানি এক নাগরিককে হত্যার পর রেস্তোরাঁর ডিপ ফ্রিজে ভরে রেখেছিল জঙ্গিরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ ময়নাতদন্তের পর প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘পাঁচজন জঙ্গির পক্ষে ২০ জন মানুষকে এভাবে খুন করা স্বাভাবিক বিষয় নয়। খুনের পর কিছু মৃতদেহকে তারা বিকৃত করে।’
ফরেনসিক মেডিসিনের চিকিৎসকেরা জানান, নিহত পাঁচ জঙ্গির মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বোমার আঘাতে। বোমায় ১ জনের হাতের কবজি, ১ জনের হাত এবং ১ জনের মুখের একপাশ থেঁতলে যায়।