ইসির কার্যক্রম প্রশ্নের সম্মুখীন: মাহবুব তালুকদার
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, অভ্যন্তরীণ অনিয়মের কারণে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলছে বলে তিনি দাবি করেন।
আজ সোমবার বেলা ৩টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের একটি নিয়োগ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে অন্য চার নির্বাচন কমিশনারের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ বিষয়ে মাহবুব তালুকদার নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলে আসছে, যা নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ও নির্বাচন কমিশন কার্যপ্রণালী বিধিমালা সমর্থন করে না।
মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাম্প্রতিক কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় ১৩৫ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে তিনি ইসি সচিবালয়ের কাছে লিখিতভাবে কিছু তথ্য জানতে চান। জবাবে তাঁকে জানানো হয়, হাতের লেখার অমিল বা পরিচয়পত্রের অমিলের কারণে মৌখিক পরীক্ষার সময়ে ওই ১৩৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া প্রতারণার দায়ে মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইসি সচিবালয়ের মাঠপর্যায়ের কার্যালয়ে ১২তম থেকে ২০তম গ্রেডের ১০টি পদে ৩৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেয় ইসি সচিবালয়। এতে মোট ৮৫ হাজার ৮৯৩ জন আবেদন করেন। চলতি মাসে নিয়োগ চূড়ান্ত করে নিয়োগপত্র ছাড়া হয়।
মাহবুব তালুকদার তাঁর লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও উত্তরপত্র যাচাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদকে ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এই অর্থ প্রধান নির্বাচন কমিশনার অনুমোদন করলেও কতজন পরীক্ষককে কীভাবে প্রদান করা হয় সেই হিসাব কমিশনের কাছে নেই। এমনকি নিয়োগ কমিটির সদস্যবৃন্দও এ বিষয়ে জানেন না। ইসি সচিবালয় পরীক্ষা সম্পর্কে কিছু জানে না এবং প্রশ্নপত্রের ধরনও প্রশ্নবিদ্ধ বলে মাহবুব তালুকদার দাবি করেন।
গত ১৪ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে এক সভায় অন্য নির্বাচন কমিশনাররা অভিযোগ করেন, ইসি সচিবালয় এই নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত ও অর্থ ব্যয় সম্পর্কিত বিষয়ে কমিশনকে কোনো পর্যায়েই জানায়নি। তবে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব তাঁদের জানান, এ নিয়োগ বা তার ব্যয় নির্বাচন কমিশনারের এখতিয়ার বহির্ভূত। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও তার বক্তব্যকে সমর্থন করেন বলে অভিযোগ মাহবুব তালুকদারের। এ কারণেই বাকি চার নির্বাচন কমিশনার গতকাল রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে একটি ইউনোট মাধ্যমে ইসি সচিবালয়ের কার্যাদির বিষয়ে কমিশনের এখতিয়ার সম্পর্কে জানতে চান।
মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমি মনে করি অভ্যন্তরীণ অনিয়মের কারণে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। অনেক ক্ষেত্রে সচিবালয়ের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত প্রায় সর্বক্ষেত্রেই দায় বহন করতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ইসি ও সচিবালয়ের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।