'কক্সবাজারে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে দূষণ ছড়াবে'
সুন্দরবনের পাশে রামপালে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে সেখানকার পরিবেশ বিপন্ন হতে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার কক্সবাজারে ১৭টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প করতে যাচ্ছে। এগুলো হলে কক্সবাজারে বড় ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে আসবে। এখান থেকে যে দূষিত পদার্থ বের হবে, তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ওয়াটার্স কিপারস বাংলাদেশের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব আশঙ্কার কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, কক্সবাজারে ১৭টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে তা হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুচ্ছ প্রকল্প। একই সঙ্গে তা হবে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। এই প্রকল্প দেশের অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলবে। এ ধরনের প্রকল্প থেকে সরে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা।
বাপার সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, ধনী দেশগুলোর দূষণের কারণে যে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, বাংলাদেশ তার ভুক্তভোগী হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু যেভাবে সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে শুরু করে কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গুচ্ছ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ দ্রুত দূষণকারী দেশের তালিকায় নাম লেখাবে। এ ধরনের আচরণ সংবিধানে পরিবেশ সুরক্ষার যে অঙ্গীকার রয়েছে, তার লঙ্ঘন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংস হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘এসব কথা দীর্ঘদিন ধরে আমরা বলে আসছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আমরা দেয়ালের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা বলে যাচ্ছি, গণমাধ্যম লিখে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার আমাদের কথায় কান দিচ্ছে না।’
সংবাদ সম্মেলনে ‘বিশ্বের বৃহত্তম গুচ্ছ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার বিপন্ন’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলা শহর ও সমুদ্রসৈকতের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৭টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এগুলো নির্মিত হলে সেখান থেকে ৭ কোটি ২০ লাখ টন কার্বন ডাই–অক্সাইড, কয়েক হাজার টন ছাই ও ৫ হাজার ৮০২ কেজি পারদ নির্গত হবে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কক্সবাজারের ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য খরচ পড়বে ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প হবে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৩টি স্থাপন করা হবে বন্যাপ্রধান এলাকা মহেশখালীতে। চিংড়ি, পান ও লবণ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ওই এলাকা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই এলাকার ওপর প্রায় ১২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল। দেশে উৎপাদিত লবণের ৭০ শতাংশ আসে এই এলাকা থেকে। আর এখানে বছরে ৪ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকার মিষ্টি পান হয়। কক্সবাজারের হাজার কোটি টাকার পর্যটনশিল্পসহ সবকিছু ধ্বংসের দিকে চলে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শারমিন মুর্শিদ বলেন, ‘আমরা যে কয়লাভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলছি, তার দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল হবে মারাত্মক। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তিসহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় বাংলাদেশ যে স্বাক্ষর করেছে, তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।’
বাপার সহসভাপতি ডা. আবদুল মতিনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বাপা কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী, বাপা মহেশখালীর সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিকী।