'আমরা যা খাব না, অন্যকে তা খাওয়াব না'
বগুড়া সদর উপজেলার লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের ছোট্ট গ্রাম কাজী নুরুইলের বাসিন্দা আহসানুল কবির। সেখানে ২০ শতাংশ জমিতে বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদনে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। বিষমুক্ত সবজি চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে নতুন স্লোগান ছড়িয়ে দিয়েছেন, ‘আমরা যা খাব না, অন্যকে তা খাওয়াব না।’
গ্রামটির বেশির ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষকেরা সারা বছর জুড়ে মাঠে মাঠে সবজি ফলায়। উৎপাদিত সবজি তারা নিজেরাও খায়। আবার উদ্বৃত্ত সবজি বিক্রি করে বাড়তি আয়ে সংসারে খরচ চালায়।
কৃষকেরা এখন খেত থেকে বেগুন তুলতে শুরু করেছেন। জোয়ার এসেছে ব্যাপক। প্রথম দিনে ২০ শতাংশ জমি থেকে প্রায় ২৭ কেজি বেগুন উঠেছে। সেগুলো স্থানীয় পীরগাছা বাজারে কৃষকেরা ৭৭০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।
উদ্যোক্তা আহসানুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, এবারই রাসায়নিক ও কীটনাশকমুক্ত বেগুন চাষ শুরু করেছেন তারা। ভার্মি কম্পোস্ট ট্রাইকো ডার্মা সার ও গোবর সার দিয়ে বেগুন চাষ করেছেন। আগে জৈব সার কিনে আনতেন। এখন নিজেরাই জৈব সার তৈরি করেন।
আহসানুল বলেন, কর্ষণ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে ৩ বছর আগে অরগানিক সবজির চাষ শুরু করেন। তাঁদের সংগঠনের সদস্য এখন ১৩ জন। প্রথম দিকে ঢেঁকি ছাটা চাল ও জিংক চাল অনলাইনের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেন। এরপর কর্ষণ সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়। প্রথম থেকে টমেটো ও আগাম জাতের ক্ষীরা চাষ করে ভালো সুফল পেয়েছেন।
বেগুন খেতটির দুই ধারে মুলা, দক্ষিণে লাউ খেত আর উত্তরে সোনালি রঙের ধান ঝিলিক দিচ্ছে।
খেতের মাঝখানে উঁচু করে স্থাপন করা হয়েছে সোলার লাইট ট্র্যাপ। এটি পরিচিত আলোক ফাঁদ নামে। পদ্ধতিটি নতুন না। আগে এই প্রযুক্তি প্লাস্টিকের জারে পানি রেখে ব্যবহার করা হতো। এখন সেখান থেকে বেরিয়ে সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে রাতে আলোক ফাঁদ পেতে পোকা দমন করা হচ্ছে।
সোলার লাইট ট্র্যাপ সূর্য থেকে তাপ সংগ্রহ করে। রাতের বেলায় আলো দেয়। এ আলোয় আশপাশের প্রায় ৮ বিঘা জমির পোকামাকড় এসে ফাঁদে পড়ে মারা যায়।
বগুড়া সদর উপজেলার পীরগাছা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বেগুনের চারা রোপণ শুরু থেকে আজ পর্যন্ত জমিতে কীটনাশক বা রাসায়নিক কীটনাশক বা রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়নি। জৈব সার ব্যবহার করা হয়েছে।
পাশাপাশি এখানে সোলার সিস্টেম বা আলোক ফাঁদ ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পোকা আটকে পড়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা দাবি করেন, এই বেগুন খেতের আশপাশে আরও চারটি বেগুন খেত ছিল। বেশি বেশি কীটনাশক ব্যবহারের ফলে তাদের খেত নষ্ট হয়ে গেছে।