নান্দনিকতায় সাজল জীর্ণ কমিউনিটি সেন্টার
কমিউনিটি সেন্টারটির ভেতরে ছিল স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, বাতাসে ভ্যাপসা গন্ধ। ছাদ চুইয়ে পড়ত বৃষ্টির পানি। ছিল না পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। ফলে সামাজিক, সাংস্কৃতিক সব রকমের অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। এখন এই কমিউনিটি সেন্টার সংস্কার করে দৃষ্টিনন্দন সাজে সাজানো হয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বারোদ্ঘাটনের অপেক্ষা।
এই কমিউনিটি সেন্টার পুরান ঢাকার সূত্রাপুর নতুন রাস্তার রেবতী মোহন দাস লেনে অবস্থিত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) এই সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টার সংস্থাটির ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। এই ওয়ার্ডে আনুমানিক ৭০ হাজার লোকের বসবাস। জানা গেছে, চলতি মাসেই নতুন সংস্কার করা কমিউনিটি সেন্টারটির উদ্বোধন করা হবে।
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এই কমিউনিটি সেন্টারের উদ্বোধন করেছিলেন। প্রায় ১৬ কাঠা জমির ওপর নির্মিত এই কমিউনিটি সেন্টারে শীতাতপনিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। এখন কমিউনিটি সেন্টারটিতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ, আলোকসজ্জার ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক উন্নত মানের সুবিধা সংযোজিত করা হয়েছে।
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ভেতরের অবকাঠামোগত পরিবর্তনে পুরোদমে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে মূল মিলনায়তনের কাজ শেষ হয়েছে। আলোকসজ্জার কাজও শেষ। মিলনায়তনের দক্ষিণ দিকে বারান্দার পুরোনো টাইলস ভেঙে সেখানে নতুন টাইলস বসানোর কাজ করছেন শ্রমিকেরা। কমিউনিটি সেন্টারের প্রবেশের বাঁ পাশে দুটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র বসানো হয়েছে। এর আগে অবশ্য সেখানে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ছিল না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য আনুষঙ্গিক কাজও শেষ হয়েছে।
কমিউনিটি সেন্টারের সংস্কারকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা জানান, সংস্কারে নতুনত্ব আনতে গিয়ে ব্যাপকভাবে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। মূল মিলনায়তনে শতাধিক বাতি লাগানো হয়েছে। শীতাতপনিয়ন্ত্রণে ২১টি যন্ত্র বসানো হয়েছে। ফ্যান লাগানো হয়েছে শতাধিক। মূল মিলনায়তনের দুই পাশেই দুটি মঞ্চ করা হয়েছে। বর ও কনের সাজসজ্জার জন্য দুটি পৃথক কক্ষ রাখা হয়েছে। মিলনায়তনে একসঙ্গে ৪০০ লোকের খাবারের ব্যবস্থা আছে। অবস্থান করতে পারবেন প্রায় দেড় হাজার মানুষ।
সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টারের তত্ত্বাবধায়ক নুরুল ইসলাম খান বলেন, ওই এলাকায় বেসরকারিভাবে পরিচালিত দুটি কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। সেগুলো অনেক ছোট। সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টার আয়তনের দিক থেকে অনেক বড়। নান্দনিকভাবে এটি সংস্কার করা হচ্ছে। পুনরায় এটি চালু হলে এলাকার বাসিন্দারা এর সুফল পাবেন। ঋষিকেশ দাস রোডের বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, কমিউনিটি সেন্টারটি সংস্কারে খুশি হয়েছেন। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচর্যার ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকে। যত্ন না করার কারণে অল্প সময়ে তা নষ্ট হয়ে যায়। তবে সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টার সংস্কারের পর এর নান্দনিকতা যাতে বজায় থাকে, সে দিকে সংশ্লিষ্টদের তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে।
সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টারের সংস্কারকাজের দেখভাল করে ডিএসসিসির অঞ্চল-৫ (সায়েদাবাদ)। অঞ্চলটির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারকাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৯২ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২৩ নভেম্বর ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এর উদ্বোধন করবেন।
ডিএসসিসি এলাকায় সংস্থাটির আওতাধীন কমিউনিটি সেন্টারগুলোর দেখভাল করে সমাজকল্যাণ ও সংস্কৃতি বিভাগ। এই বিভাগের উপসমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ডিএসসিসির মোট ৩৬টি কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ১৫টি ব্যবহৃত হচ্ছে। ৫টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাকি ১৬টি কমিউনিটি সেন্টারের সংস্কারকাজ চলমান রয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও সংস্থাটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুন্সি মোহাম্মদ আবুল হাসেম প্রথম আলোকে বলেন, মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টারটির সংস্কার করা হয়েছে।