স্বেচ্ছাসেবক লীগে যে কারও ভাগ্য খুলে যেতে পারে
শুদ্ধি অভিযানের কারণে এবার অনেকটা ভিন্ন পরিবেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হতে যাচ্ছে। দলীয় কার্যালয়ের সামনে পদপ্রত্যাশী নেতাদের পক্ষে কর্মী–সমর্থকদের স্লোগান নেই। সকাল–বিকেল নেতা–কর্মীদের মিছিল বা মোটরসাইকেলের মহড়াও নেই। পদপ্রত্যাশী নেতাদের পক্ষে কিছু পোস্টার, ডিজিটাল ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড টাঙানো ছাড়া লোকদেখানো প্রচারণাও এবার নেই।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আগামীকাল শনিবার। ইতিমধ্যে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন শেষ হয়েছে। তবে সম্মেলন হয়ে গেলেও উত্তর ও দক্ষিণ কোনো কমিটিরই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়নি। শনিবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ওই দুটি কমিটির শীর্ষ চারটি পদে কারা নেতৃত্বে আসছেন সে ঘোষণা আসবে।
সংগঠনটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা প্রথম আলোকে বলেন, চলমান শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতৃত্ব নির্বাচনের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলন ঘিরে তাই টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব দেখাতে পারছেন না কেউ। নেতৃত্ব নির্বাচনে কোনো সিন্ডিকেটও কাজ করছে না এবার। তাই যে কারও ভাগ্য খুলে যেতে পারে শনিবার। কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুটি পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন ৩০ জনের বেশি নেতা।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৭১ জনের নাম প্রস্তাব করেছেন কাউন্সিলররা। এর মধ্যে মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন হয় ১১ নভেম্বর। সভাপতি পদে ১৮ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২৮ জনের নাম প্রস্তাব করা হয় সম্মেলনে। আর ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সম্মেলন হয় ১২ নভেম্বর। সভাপতি পদে ১১ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জনের নাম প্রস্তাব করা হয় সম্মেলনে।
>কেন্দ্রীয় সম্মেলন আগামীকাল শনিবার
শীর্ষ দুই পদ পেতে সক্রিয় অন্তত ৩০ জন নেতা
গত ১৮ সেপ্টেম্বর শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছারের নাম নানাভাবে আলোচনায় আসে। এরপর ২৩ অক্টোবর তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর এক দিন পর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পংকজ নাথকে সম্মেলনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। গঠনতন্ত্র অনুসারে গঠিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ইতিমধ্যেই ১৩টি উপকমিটি গঠন করে সম্মেলনের প্রস্তুতির কাজ শেষ করে এনেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ১ হাজার ৯৭৫ জন কাউন্সিলর, ১৮ হাজার ডেলিগেটসহ (অতিথি) ৩৫ হাজার লোকের উপস্থিতি আশা করছেন নেতারা। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১২ সালের ১১ জুলাই।
দলীয় সূত্র জানায়, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি পদে জ্যেষ্ঠ কাউকে আনা হতে পারে। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ ও সদস্যসচিব গাজী মেজবাহুল হোসেন দুজনেই সভাপতি প্রার্থী। বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মতিউর রহমান, আফজালুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আলিমও আছেন সভাপতি হওয়ার আলোচনায়। আর সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে পারেন তুলনামূলক তরুণ কেউ। এ পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আজিম, শেখ সোহেল, সাজ্জাদ সাকিব ও খায়রুল হাসান। তবে আলোচনায় থাকা নেতাদের অতীত কার্যক্রম, এক-এগারো পরবর্তী সময়ে ভূমিকা এবং বর্তমান পদের অপব্যবহার করার কোনো অভিযোগ আছে কি না, তা বিবেচনায় নেওয়া হবে। যাঁরা ঠিকাদারি পেশায় আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দরপত্র নিয়ন্ত্রণের অভিযোগও খতিয়ে দেখা হবে।
আওয়ামী লীগের দুজন দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতা প্রথম আলোকে বলেন, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের সম্মেলনে ইতিমধ্যেই বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে শীর্ষ নেতা নির্বাচন করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনেও এর ব্যতিক্রম হবে না। সংগঠনের জ্যেষ্ঠ ও নবীন নেতাদের মধ্যে সমন্বয় করেই তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ প্রথম আলোকে বলেন, কারা নেতা হবেন সে বিষয়ে সাংগঠনিক নেত্রীর (শেখ হাসিনা) নির্দেশনাই চূড়ান্ত। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির পরীক্ষিত নেতাদের মধ্য থেকেই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।