লড়াই ছাপিয়ে বন্ধুত্ব ছড়ায় যে কুস্তি
স্টেডিয়ামের সব কটি গ্যালারি দর্শকে কানায় কানায় পূর্ণ। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। মাথার ওপর তপ্ত রোদ। তবু খেলা দেখতে হবে, শামিল হতে হবে আনন্দ উৎসবে।
এমনি উৎসবের আমেজে আজ বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্ত উপজেলা কুস্তি প্রতিযোগিতা। সকাল ১০টায় অন্তত ২০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ।
হাওর এলাকার বাসিন্দারা জানান, সুনামগঞ্জে গ্রামে গ্রামে যে কুস্তি খেলা হয়, সেটিকে তারা ‘দাওয়াতি’ বা ‘ভাইয়াপি’ কুস্তি খেলা বলেন। খেলার জন্য এক গ্রামের মানুষ আরেক গ্রামের মানুষকে দাওয়াত দেন বলে এর নাম ‘দাওয়াতি’ কুস্তি। দাওয়াতি গ্রামের লোকদের থাকা-খাওয়ার আয়োজন করে যে গ্রাম দাওয়াত করে তারা। খেলায় যাঁরা অংশ নেন তাঁদের বলা হয় ‘মাল’। যাঁরা খেলা পরিচালনা করেন তাঁদের বলা হয় ‘আমিন’। তিনজন আমিন খেলা পরিচালনা করেন। এসব খেলায় গ্রামে গ্রামে মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্ব বাড়ে। দুই এলাকার মানুষের মধ্যে যোগাযোগ হয়, সম্প্রীতির বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। এই যোগাযোগ থেকে আবার অনেকের মধ্যে বিয়েশাদি ও আত্মীয়তার সূচনা হয়। সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কুস্তি খেলার মৌসুম। এরপর আবার হাওরে বোরো আবাদে নেমে পড়েন কৃষকেরা।
এবারের খেলায় জেলার পাঁচটি উপজেলার খেলোয়াড়েরা অংশ নেন। উপজেলাগুলো হলো—সুনামগঞ্জ সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার খেলোয়াড়েরা অংশ নেন। সুনামগঞ্জ স্টেডিয়ামে দিনভর চলে এই কুস্তি।
সদর উপজেলার বড়ঘাট গ্রামের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম দীর্ঘদিন থেকেই কুস্তি খেলা আয়োজনে যুক্ত। তিনি বলেন, এবার তাঁর জানামতে জেলায় প্রায় এক শ দাওয়াতি কুস্তি খেলা হয়েছে। এসব খেলার আয়োজন দেখেই মূলত জেলা প্রশাসন একটা বড় আয়োজনের চিন্তা করেছে।
বৃহস্পতিবারের আন্ত উপজেলা কুস্তি খেলায় অতিথি হিসেবে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, সুনামগঞ্জে বিজিবির ২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমীর বিশ্বাস, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন নাহার প্রমুখ।