আবাসন সুবিধা পান ১৩% সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী

>

সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আবাসনের জন্য নির্মাণাধীন ভবন। সম্প্রতি মিরপুরে।  প্রথম আলো
সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আবাসনের জন্য নির্মাণাধীন ভবন। সম্প্রতি মিরপুরে। প্রথম আলো

ঢাকা শহরে বাসা পাওয়ার যোগ্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন প্রায় এক লাখ। কিন্তু সরকারি বাসা পেয়েছেন ১২ হাজারের মতো।

ঢাকা শহরে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় ৮৭ শতাংশই বাসা বরাদ্দ পান না। বেশির ভাগ কর্মকর্তা–কর্মচারীকেই থাকতে হয় ভাড়া বাসায়, যার প্রভাব পড়ছে পুরো আবাসন খাতেই। এমন পরিস্থিতিতে ২০২১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে চাইছে সরকার। এ লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে।

নগরবিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বিশৃঙ্খল খাতের অন্যতম হলো আবাসন। এই খাতে সরকারি অংশগ্রহণ খুবই সীমিত। আবাসন খাতে সরকারের অংশগ্রহণ বাড়লে পুরো ব্যবস্থাতেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

২০১৬ সালে প্রকাশিত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঢাকার কাঠামো পরিকল্পনার (খসড়া) অনুযায়ী, ঢাকার আবাসন খাতটি গড়ে উঠেছে মূলত বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে। সরকারিভাবে আবাসনের সুযোগ খুবই সীমিত। খসড়ায় বলা হয়, ঢাকায় মোট আবাসের মাত্র ৭ শতাংশের জোগান দিয়েছে সরকার। ৫১ দশমিক ১৫ শতাংশ বাড়ি বানানো হয়েছে ব্যক্তি উদ্যোগে। আর বাকি ৪১ দশমিক ৮৫ শতাংশ ভবন নির্মাণ করেছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা।

ঢাকা শহরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসা বা বাড়ি বরাদ্দের মূল কাজটি করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি আবাসন পরিদপ্তর। 

পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা শহরে শতাধিক সরকারি বিভাগ, দপ্তর, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা আছে। এসব সংস্থার মধ্যে ২০টি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিতে হয়। পুলিশ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, জাতীয় সংসদসহ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি আবাসন পরিদপ্তরের মাধ্যমেও বাসা বরাদ্দ পায়। বাকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসা সরকারি আবাসন পরিদপ্তরে অধীন।

সরকারি আবাসন পরিদপ্তরে পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শেখ আতাহার হোসেন প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহরে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯১৫ জন। তাঁদের মধ্যে বাসা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য ছিলেন ৯৯ হাজার ৯১৫ জন। তাঁদের মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশকে বাসা বরাদ্দ দেওয়া গেছে।

জানা গেছে, সরকারি আবাসন পরিদপ্তরে অধীনে বাংলোবাড়িসহ মাত্র ১২ হাজার ৬৪টি বাসা আছে। বাসা না থাকার কারণেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না।

ঢাকায় যাঁরা আবাসন সুবিধা পান না, তাঁরা মূল বেতনের ৫৫ শতাংশ বাড়িভাড়া হিসেবে পান। কিন্তু সরকার নির্ধারিত এই বাড়িভাড়ায় ঢাকায় মানসম্মত বাসা পাওয়া যায় না বলে দাবি করেছেন একাধিক সরকারি কর্মকর্তা। নাম না প্রকাশের শর্তে ৩৫তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া একজন কর্মকর্তা বলেন, বেতনের সঙ্গে তিনি ১৪ হাজার টাকার মতো বাড়িভাড়া হিসেবে পান। কিন্তু তাঁর সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী মোটামুটি মানের একটি বাসাও এই টাকায় ভাড়া পাওয়া যায় না। প্রতি মাসে সাত-আট হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হয়।

সরকারি উদ্যোগ

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের জন্য বাসাবাড়ি নির্মাণের কাজটি মূলত হয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে। গত জুন মাস পর্যন্ত এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থা সারা দেশে আবাসনসংশ্লিষ্ট ৭১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে অন্তত ২০টি প্রকল্প ঢাকা শহরে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মোট কতজন আবাসন সুবিধা পাবেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব প্রকল্পের মাধ্যমে চার হাজারের বেশি নতুন আবাসিক ফ্ল্যাট ও আরও অন্তত ২৪টি বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে।

জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যেই তাঁরা লক্ষ্য অর্জনের (৪০ শতাংশকে আবাসন সুবিধা দেওয়া) চেষ্টা করবেন। এটি সম্ভব না হলে ২০২২-২৩ সালের মধ্যে অবশ্যই ৪০ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আবাসন সুবিধা পাবেন।

সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন নগর–পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ। তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আবাসন সুবিধা না পেলে তাঁদের বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনে অথবা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে হয়। এতে বাসার চাহিদা বাড়ে। এই চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বাসাভাড়াও বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই সেটি আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয় না।