'শার্ট দেখে ভাইয়ের লাশ চিনলাম'
লাশবাহী ব্যাগটির দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছেন শামীম। বিশ্বাস হচ্ছে না কী হয়ে গেল! গতকাল সোমবার একসঙ্গে বের হয়েছিলেন দুই ভাই আলামিন ও শামীম। আজ একজন নিথর। মুখ দেখে চেনার উপায় নেই। শার্ট দেখে ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেছেন শামীম।
গতকাল রাত ১১টার দিকে সিলেটের শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন দুই ভাই। চট্টগ্রামের রুবিগেট এলাকায় ১০ তলা ভবনের একটি নির্মাণকাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। দিবাগত রাত ২টা ৪৮ মিনিটে কসবা উপজেলার মন্দবাগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় উদয়ন এক্সপ্রেসের। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন শামীমের বড় ভাই আলামিন।
আলামিন (২৮) ও শামীমের বাড়ি হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার মদনমোরজ এলাকায়। বাবার নাম আইয়ুব হোসেন। দুই ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।
শামীম বলেন, উদয়ন এক্সপ্রেসের একটি বগির দরজার পাশে বসে যাচ্ছিলেন দুই ভাই। ঘটনার সময় শামীম দরজার পূর্ব পাশে বসে ঘুমাচ্ছিলেন। আলামিন পশ্চিম পাশে বসে ঘুমাচ্ছিলেন। প্রচণ্ড ধাক্কায় শামীম ট্রেন থেকে নিচে লাফ দিয়ে পড়ে যান। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি দিশা হারিয়ে ফেলেন। ভাই কী করেছেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে ঠাওর করতে পারেননি। আজ ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ভাইকে খুঁজেছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ করতে বলেন উদ্ধারকারীদের। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ট্রেনের চাকার নিচ থেকে একটা লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশটি ব্যাগে ভরা হয়। ওই লাশের গায়ে থাকা শার্ট দেখে নিজের ভাইকে চিনতে পারেন শামীম। তবে ভাইয়ের ক্ষতবিক্ষত মুখ দেখার শক্তি নেই তাঁর।
ঘটনাস্থলের কাছে বায়েক শিক্ষা সদন উচ্চবিদ্যালয়ে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প খোলা হয়েছে। সেখানে ১০টি লাশের সঙ্গে আলামিনের লাশ রয়েছে। ভোর থেকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভাইয়ের লাশের পাশেই বসে আছেন শামীম। বলেন, আলামিনের দুই মেয়ে এক ছেলে। পরিবার নিয়ে সুখের একটি সংসার ছিল তাঁর। কঠোর পরিশ্রমী আলামিন ছোটবেলা থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন। ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা তার। পাঁচ বছর আগে ভাইয়ের সঙ্গে শামীমও রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন।
কাঁদতে কাঁদতে শামীম বলেন, একসঙ্গে বের হলাম। এখন শার্ট দেখে ভাইয়ের লাশ চিনলাম।