ভবন নির্মাণ বন্ধ, ক্লাস চলছে খোলা জায়গায়
ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের স্কুলেও পাঠাচ্ছেন না। উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার হাটাব টেকপাড়া এলাকার হাটাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান মোল্লা জানান, ৯৭ বছর আগে হাটাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। হাটাব টেকপাড়া এলাকার সমাজসেবক আইনুদ্দিন ওরফে আনু প্রধান বিদ্যালয়ের জন্য কাঞ্চন মৌজায় ৩০ শতাংশ জমি দান করেন। পরে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরী আরও সাড়ে ৭ শতাংশ ও বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি কামালউদ্দিন আহমেদ ১৩ শতাংশ জমি দান করেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার শ। দুটি আলাদা ভবনে ছয়টি শ্রেণিকক্ষ থাকলেও পুরোনো ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় দুই বছর আগে সেটি ভেঙে অস্থায়ীভাবে পাশে বিদ্যালয়ের অস্থায়ী শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়।
চলতি বছর বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। দুই মাস আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুন্না এন্টারপ্রাইজ কাজ শুরু করতে চাইলে স্কুল কর্তৃপক্ষ অস্থায়ী শেডটি ভেঙে ফেলে। পরে সেখানে পাকা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে চাইলে একই এলাকার সাবেক পৌর কাউন্সিলর আবদুল কাইয়ুম, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মুকুল হোসেন এবং কবির হোসেন, মিলন, দুলালসহ সংঘবদ্ধ একটি দল স্কুলের ৩০ শতাংশ জমি নিজেদের দাবি করে নির্মাণকাজে বাধা দেয়। এ কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষ আপত্তি করা সম্পত্তির বাইরে পাকা ভবন তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আপাতত ক্লাস করার জন্য ভেঙে ফেলা ভবনের জায়গায় একটি শেড করতে চাইলে তাতেও বাধা দেয় চক্রটি। এ কারণে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই খোলা মাঠে শিশু, তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্য আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আরএস রেকর্ড মূলে স্কুলের নামে সাড়ে ৫০ শতাংশ জমি রয়েছে। এ ছাড়া সাবেক কাউন্সিলর আবদুল কাইয়ুম প্রায় ২৫ বছর স্কুলের সভাপতি ছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেউ কখনোই স্কুলের জমি নিজের দাবি করেনি। এখন ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে জমি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
জমির মালিকানা দাবিদার মুকুল হোসেন বলেন, ‘আরএস রেকর্ডে স্কুলের নাম থাকলেও সিএস ও এসএ পরচায় আমাদের পূর্বপুরুষের নাম রয়েছে। জমি আনু প্রধানের না, আমাদের। আমরা আরএস রেকর্ডের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। মামলায় যে রায় আসবে, সেটা আমরা মেনে নেব।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহেদা আক্তার বলেন, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি স্কুলের জমি নিজেদের বলে আদালতে মামলা করেছেন। সে কারণে স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না। স্কুলের বারান্দায় বা খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করানোর বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, ‘শিশুরা খোলা মাঠে পাঠদান করছে, সে বিষয়ে আমাকে কেউ বলেনি। আর শিশুরা খোলা মাঠে ক্লাস করবে, সেটা কোনোভাবে মানতে পারছি না। আমি এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’