পাল্টে যাচ্ছে প্রজনন মৌসুম
মা ইলিশ সংরক্ষণে আরোপ করা হয়েছিল শিকারে নিষেধাজ্ঞা। তা শেষ হয়েছে গত বুধবার। এরপর জেলেরা নেমে পড়েছেন নদীতে। কিন্তু জালে যেসব ইলিশ ধরা পড়ছে, তার বেশির ভাগই ডিমওয়ালা। কাগজে-কলমে প্রজনন মৌসুম শেষ হওয়ার পরও ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ায় সবাই চিন্তিত। এ বিষয়ে গবেষকেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রজনন মৌসুমও পাল্টে যাচ্ছে। তাই নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবর্তন নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছ শিকারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ করে। ইনস্টিটিউটের ইলিশ জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ইলিশ নিয়ে গবেষণা করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন। পাঁচ বছর মেয়াদি এই গবেষণার তিন বছরের কাজ শেষ হয়েছে।
গবেষক ইয়ামিন হোসেন বলছেন, চলতি মৌসুমের ধরন অনুযায়ী ১৪ অক্টোবর থেকে পদ্মা-যমুনায় ডিম দেওয়ার জন্য ইলিশ সবচেয়ে বেশি ঢুকছে। মেঘনা-সুরমা-কুশিয়ারায় ১০ থেকে ১১ অক্টোবর এবং সাগরের নিকটবর্তী উজান এলাকায় ৯ অক্টোবর থেকে বেশি ইলিশ ঢুকছে। অর্থাৎ নিষেধাজ্ঞা শুরু সময়ের বেশ কিছুদিন পর ইলিশ প্রজননের জন্য নদীতে আসছে। আবার সাগরে ফিরেও যাচ্ছে দেরিতে। কিন্তু তার আগেই মেয়াদ শেষ হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার সময় পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।
ইয়ামিন হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবর্তনের পাশাপাশি সাগর ও তার আশপাশের নদী ও মেঘনা, সুরমা, কুশিয়ারা এবং পদ্মা, যমুনার জন্য পৃথক প্রজনন মৌসুম ঠিক করা প্রয়োজন পড়তে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে সুপারিশ করবেন তাঁরা। গত শুক্রবার রাজশাহীর কাটাখালি ও বিনোদপুর বাজারে ৮০ শতাংশ ইলিশে ডিম পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন এই গবেষক।
গবেষকেরা বলছেন, ইলিশ সারা বছরই কমবেশি ডিম দেয়। ডিম দেওয়ার জন্য এই মাছ সাগর থেকে এক দিকে পদ্মা ও যমুনা, অপর দিকে মেঘনা, সুরমা ও কুশিয়ারায় এবং সাগরের নিকটবর্তী উজানে চলে আসে। ডিম দিয়ে তারা আবার সাগরে ফিরে যায়। জাটকা অবস্থা কাটাতে তারা চার থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত নদীতেই থাকে। তারপর সাগরে গিয়ে পরিপক্বতা লাভ করে।
ইয়ামিনের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন বা অন্যান্য কারণে সাগর ও নদীতে ইলিশের প্রজননটাও আগে–পরে ঘটেছে। এতে প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, গত তিন বছরের গবেষণায় মনে হয়েছে, পদ্মা ও যমুনায় ১৪ অক্টোবর থেকে প্রচুর ইলিশ ডিম দেওয়ার জন্য ঢুকছে। আবার ৩১ অক্টোবরের পরও এই এলাকায় ধরা পড়া ইলিশের পেটে ডিম দেখা যাচ্ছে। তাই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদটা শুরুর দিকে ৯ অক্টোবরের পরিবর্তে কয়েক দিন পর থেকে এবং শেষে আরেক সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। তাঁর গবেষণাকাজ শেষ হলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ দেওয়া সম্ভব হবে।
সাধারণত ইলিশের প্রজনন মৌসুম ধরা হয় অক্টোবর মাসকে। এ সময়ে প্রায় ৮০ শতাংশ ইলিশ ডিম দিয়ে থাকে। মাসের ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রধান প্রজননকাল ধরে এই ২২ দিন ইলিশ শিকার, আহরণ ও ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে সরকার।