রক্ত লাগলেই হাজির তাঁরা
রক্তের প্রয়োজন হয়েছে কারও—এমন তথ্য পাওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারার দুটি সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা লেগে যায়। রোগীর স্বজনদের কাছে কে কার আগে রক্ত পৌঁছে দেবেন শুরু হয় তার তোড়জোড়। আনোয়ারার এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুটি হলো আনোয়ারা ব্লাড ব্যাংক ও আনোয়ারা ব্লাড ডোনেট গ্রুপ। দুস্থ মানুষের সেবায় এই দুই সংগঠনের কর্মীরা নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছেন।
রক্তের প্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রক্তদাতা এবং রক্তের খোঁজে পোস্ট দেন দুই সংগঠনের কর্মীরা। আর রক্তদাতার খোঁজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এরপর হাসপাতালে গিয়ে তাঁরা রোগীর স্বজনের হাতে রক্তের ব্যাগ তুলে দেন।
শুধু রক্ত বা রক্তদাতার খোঁজই নয়, সংগঠন দুটি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, সচেতনতামূলক মানববন্ধন, পাহাড়ধসে সহায়তা দান ও শিক্ষাবৃত্তির মতো নানা ধরনের সেবা ও প্রচারণামূলক কাজ করছে। দুটি সংগঠনেরই বেশির ভাগ সদস্য শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী।
আনোয়ারা ব্লাড ব্যাংকের সঙ্গে জড়িতরা জানান, জরুরি প্রয়োজনে রোগীদের জীবন বাঁচাতে রক্ত জোগাড় করে দেওয়ার মনমানসিকতা নিয়ে কিছু তরুণ ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই আনোয়ারা ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর সপ্তাহে গড়ে ১৫-২০ জনকে রক্ত সংগ্রহ করে দেন তাঁরা। এ পর্যন্ত সাড়ে ৫০০ বিভিন্ন রোগীকে রক্ত জোগাড় করে দিয়েছে সংগঠনটি। বর্তমানে সংগঠনের ফেসবুক গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত আছেন ১৭ হাজার সদস্য। ইতিমধ্যে বিনা মূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের ২০টি কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনটি। এটির পরিচালনায় আছেন ১৪ জন।
সাইফুল ইসলাম নামের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত উপজেলার বরুমচড়ার শহীদ বশরুজ্জামান উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীকে গত ১৯ মাসে ১৯ বার রক্ত দিয়েছেন ব্লাড ব্যাংকের সদস্যরা।
আনোয়ারা ব্লাড ব্যাংকের আহ্বায়ক আবদুল মালেক চৌধুরী বলেন, ‘একজন রোগীও যেন রক্তের অভাবে মারা না যায়। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।’
>আনোয়ারা ব্লাড ব্যাংক ও ব্লাড ডোনেট গ্রুপের কর্মীরা দুস্থ মানুষের পাশে থাকছে সব সময়।
আনোয়ারা ব্লাড ব্যাংকের ঠিক এক বছর পর ২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর আনোয়ারা ব্লাড ডোনেট গ্রুপ নামের আরেকটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। এটিও তারুণ্যনির্ভর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। জরুরি রক্তের প্রয়োজনে তাঁরা রোগীদের পাশে দাঁড়ান।
সংগঠনের তরুণদের অনলাইনে বা মুঠোফোনে বার্তা পেয়ে প্রতিদিন দুই–তিনজন আর সপ্তাহে ১৫ জনের মতো রক্তদাতা রক্ত দেন। সংগঠনটির তত্ত্বাবধানে রক্ত দিয়েছেন ১ হাজার জনের বেশি। ফেসবুকে জড়িত আছেন ১০ হাজারের মতো সদস্য। সংগঠনের পরিচালক ১৩ জন আর সাধারণ সদস্য আছেন ৭০ জন। ইতিমধ্যে ১০টির মতো প্রচারণা কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনটি। এর বাইরে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতায় সক্রিয় রয়েছেন তাঁরা। রক্তের গ্রুপ নির্ণয় শেষে বিনা মূল্যে গাছের চারা বিতরণ, শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ, বিনা মূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার মতো কাজ করছে সংগঠনটি।
সর্বশেষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়া আনোয়ারার শিক্ষার্থীদের জন্য দুদিন দুটি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। এতে বিনা ভাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করেছেন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা।
আনোয়ারা ব্লাড ডোনেট গ্রুপের পরিচালকেরা বলেন, মানবতার জন্য কাজ করছে সংগঠনটি। ভবিষ্যতে আরও বড় কর্মসূচি পালন করা হবে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জুবায়ের আহমেদ বলেন, আনোয়ারায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির লক্ষ্যে দুটি সংগঠন প্রতিযোগিতা দিয়ে কাজ করছে। এটা সমাজের জন্য বিশাল ইতিবাচক দিক।