নুসরাতের মা-ভাইকে ফোন করে হুমকি
ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের মা ও বড় ভাইকে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার তাঁদের এ হুমকি দেওয়া হয়। এ ছাড়া আগের দিন বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার ঠিক আগমুহূর্তে নুসরাতদের বাড়ির ডিশ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ বৃহস্পতিবার নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মামলার প্রধান আসামি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রত্যেক আসামিকে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত।
নুসরাতের বড় ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, জুমার নামাজের আগে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল করে তাঁকে গালাগাল ও হুমকি দেওয়া হয়। এরপর থেকে তাঁরা শঙ্কায় রয়েছেন। এর আগে সকালে তাঁর মায়ের মুঠোফোনেও কল দিয়ে একইভাবে হুমকি দেয় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
মাহমুদুল হাসান আরও অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার আগমুহূর্তে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাঁদের বাড়ির টেলিভিশনের ডিশ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ছয় ঘণ্টা পর পুলিশের হস্তক্ষেপে ডিশ লাইনের মালিক নতুন তার দিয়ে লাইন সচল করেন। মাহমুদুল বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা ফেনীর আদালতে যান। দুপুরে এসে দেখতে পান ডিশের লাইন কাটা।
এসব ব্যাপারে সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. খালেদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নুসরাতের বাড়িতে ডিশের লাইন বিচ্ছিন্ন করার কথা শুনে তিনি নিজে ডিশের মালিককে ফোন করে দ্রুত লাইনটি সচল করার ব্যবস্থা করেন। মুঠোফোনে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। তিনি আরও বলেন, নুসরাতের বাড়িতে দুজন কর্মকর্তাসহ ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। একইভাবে পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয়ও পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
থামছে না মায়ের কান্না
আদালতের রায়ে আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ এলেও থামছে না নুসরাতের মায়ের কান্না। গতকাল বিকেলে পৌরসভার উত্তর চর চান্দিয়া এলাকায় নুসরাতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে মা শিরিনা আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। কারও সহানুভূতিই থামাতে পারছে না তাঁর কান্না। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর থেকেই বাড়িটি লোকারণ্য হয়ে রয়েছে। সহানুভূতি জানাতে আসা অনেকেই শিরিনা আক্তারের কান্না দেখে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। বাড়িটিতে গতকালও আগের মতোই পুলিশের নিরাপত্তা ছিল।
নুসরাতের আত্মীয় মো. সেলিম বলেন, তিনি মামলার রায় ঘোষণা উপলক্ষে পরিবার নিয়ে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থেকে নুসরাতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে সোনাগাজীতে এসেছেন। তিনি সরকারের প্রতি রায় দ্রুত কার্যকরের আহ্বান জানান।
এদিকে গতকাল সোনাগাজীর বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজে নুসরাতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তাঁর মা শিরিনা আক্তার সোনাগাজী থানায় মামলা করলে পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে। মামলা তুলে না নেওয়ায় গত ৬ এপ্রিল নুসরাতকে মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে তাঁর হাত–পা বেঁধে গায়ে আগুন দেয় বোরকা পরা পাঁচজন। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে নুসরাতের মৃত্যু হয়।