অভিমানী সেই মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে চাকরি ফিরিয়ে দিল প্রশাসন
চাকরিচ্যুতি নিয়ে বুকভরা অভিমান নিয়ে চিঠি লেখার দুই দিন পর মারা যাওয়া সেই মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের ছেলেকে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়।
সন্ধ্যায় দিনাজপুর সদর উপজেলার যোগীবাড়ি গ্রামে সদ্য প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে আসেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহমুদুল আলম। তিনি শোকার্ত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। এ সময় মাহমুদুল আলম বলেন, ‘ঘটনাটি পূর্ব থেকে আমাকে জানালে এত কিছু ঘটত না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে “গার্ড অব অনার” দিতে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁর পরিবারের লোকজন সেটি করতে দেয়নি। নীলফামারীতে থাকা অবস্থায় এ কথা শোনার পরেই আমি বলেছি, সাত দিনের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হবে।’
প্রয়াত ওই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নূর ইসলামকে জেলা প্রশাসক বলেন, মনের অবস্থা স্বাভাবিক হলে যে নিয়মে নূর ইসলাম চাকরি করতেন, সেভাবেই তাঁর (জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে) অফিসে চাকরি করবেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর রাত আটটার দিকে জেলা প্রশাসকের ডাকে নূর ইসলাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোকাদ্দেস হোসেন, উপজেলা কমান্ডার লোকমান হাকিম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইমদাদ সরকার, ইসমাইল হোসেনের লিখে যাওয়া চিঠির সাক্ষী এ এস এম জাকারিয়া।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে নূর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি অনেক আফসোস করে বলেছেন, “চাকরি তুমি ফিরে পেলে, কিন্তু বাবা তাঁর শেষ সম্মানটুকু নিতে পারলেন না।”’
নূর ইসলাম জানান, তাঁকে ফের চাকরিতে যোগদান করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে যে বাসায় তিনি থাকতেন, সেখানে থাকার অনুমতিও দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এ বিষয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলে কাজে যোগ দেবেন বলেও জানান তিনি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. লোকমান হাকিম বলেন, ‘চিঠির বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি মৃত্যুর পরে। একজন মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্র প্রদত্ত সম্মানটুকু নিয়ে কবরে যেতে পারলেন না, এটি দুঃখজনক। যদি আগে থেকে বিষয়টি জানতে পারতাম, তাহলে এই অনাকাঙিক্ষত ঘটনাটা এড়ানো যেত।’
দিনাজপুর সদর উপজেলার যোগীবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের ছেলে নূর ইসলাম ভূমি কমিশনারের গাড়িচালক পদে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করতেন। ছেলে চাকরিচ্যুত হলে প্রশাসনের ওপর অভিমান করে নিজের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করার কথা চিঠিতে লিখে যান ওই মুক্তিযোদ্ধা। সেই চিঠি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোর আগেই গত বুধবার দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে চিঠির অসিয়ত অনুযায়ী, তাঁর স্বজনেরা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন করেন।