এক অফিস সহকারীর এত দাপট
আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ঘরে ঝুলছে তালা। তালা ও দরজার শিকলে মরিচা ধরেছে। দেড় বছর আগে নির্মাণের পর থেকেই ঘরটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। কারণ, ঘরটি যাঁর জমিতে করা হয়েছে, তাঁর রয়েছে পাকা বাড়ি। তিনি হলেন জাকির হোসেন। বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের বর্ধমানপাড়ায়। তিনি কালাই উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারীর পদে চাকরি করেন। শুধু পাকা বাড়িই নয়, তাঁদের আছে কয়েক বিঘা জমি।
অথচ এ প্রকল্পের ঘর পেতে উপজেলা পরিষদ ও ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও ইউএনওর কাছে দৌড়ঝাঁপ করলেও অনেক হতদরিদ্রের কপালে ঘর জোটেনি। জুটেছে জাকির হোসেনের কপালে। শুধু তা-ই নয়, জাকিরের স্ত্রীর নামেও রয়েছে ভিজিএফ কার্ড। এ ছাড়া জাকির হোসেন তাঁদের আলিশান বাড়ির সামনে সরকারিভাবে একটি সোলার সড়কবাতিও স্থাপন করিয়ে নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাকির হোসেন তদবির করে তাঁর চাচা আক্কাছ আলীর নামে ওই প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নেন। তবে তিনি তাঁর চাচার জমিতে ঘরটি নির্মাণ করেননি। করেছেন নিজের জমিতে।
সরকারি সম্পদ ভোগদখল ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বর্ধমানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফারুক হোসেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামের শেষ প্রান্তে জাকির হোসেনের আলিশান বাড়ির সামনে থেকে ২০ গজ দূরে সরকারি প্রকল্পের পরিত্যক্ত ঘর। ঘরের সামনে গাছের ডালপালা রাখা হয়েছে। টিন দিয়ে নির্মিত ঘরটির দরজায় তালা ঝুলছে। ঘরের সঙ্গে নির্মিত টয়লেটেরও একই অবস্থা। গ্রামবাসী ও জাকির হোসেনের কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, জাকির হোসেন তদবিরের মাধ্যমে প্রকল্পের ঘরটি নিজ জমিতে করিয়েছেন। প্রয়োজন না থাকায় নির্মাণের পর থেকেই ঘরটি পড়ে আছে। বাড়ির সামনে সড়কবাতি লাগিয়ে নিয়েছেন। তাঁর স্ত্রীর নামে ভিজিএফ কার্ডও রয়েছে।
জাকিরদের বাড়ির ভেতর ঢুকে তাঁর মা-বাবা ও স্ত্রীকে পাওয়া গেল। জাকির হোসেনের বাবা রেজাউল ইসলাম বললেন, ‘আমার ছেলে ভূমি কার্যালয়ে চাকরি করে। আমার এক ছেলে বিদেশে আছে। বাড়িটি নির্মাণ করতে ৩০ লাখ টাকার ওপরে খরচা হয়েছে।’ সরকারিভাবে নির্মিত ঘরটি কার জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘরটি আমার বড় ভাই আক্কাছের।’ ঘরটি আক্কাছের জায়গাতেই নির্মাণ করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে আলাপচারিতার একপর্যায়ে বাইরে আসেন তাঁর ছোট ছেলে বিদ্যুৎ হোসেন। তিনি বললেন, ‘ঘরটি আমার বড় চাচার নামে রয়েছে। কিন্তু যেখানে ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেই জায়গাটি আমাদের। জাকির ভাই ঘরটি করে নিয়েছেন।’
গ্রামের বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, ‘ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখনো কেউ তদন্তে আসেনি।’
জাকির হোসেন বলেন, ‘সরকারি টাকায় নির্মিত ঘরটি আমার বড় চাচা আক্কাছের নামে রয়েছে। চাচা বাড়ি ভাঙলে সেই ঘরে উঠবেন। আমি স্বেচ্ছাসেবক লীগের ইউনিয়নের নেতা ছিলাম। তখন এমপি সাহেবকে আমার বাড়ির সামনে একটি সোলার সড়কবাতি দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম।’ স্ত্রীর নামে ভিজিএফ কার্ড থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার শ্বশুর মানিক আওয়ামী লীগ করেন। আমার স্ত্রী যখন বাপের বাড়িতে ছিলেন, তখন কার্ডটি করে দিয়েছেন।’
সোনামুখী ইউপির চেয়ারম্যান ডি এম রাহেল ইমাম বলেন, ‘জাকির হোসেনের বাবা রেজাউল ইসলাম সম্পদশালী। জাকির হোসেনের স্ত্রীর নামে যে ভিজিএফ কার্ড রয়েছে, সেটি আমার জানার বাইরে। সরকারি টাকায় নির্মিত ঘরটি পরিত্যক্ত রয়েছে, সেটিও আমি জানি না।’