যুবলীগ চেয়ারম্যান ২০ দিন কার্যালয়ে যান না
সর্বশেষ গত ২০ সেপ্টেম্বর উত্তরায় সংগঠনের একটি ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনে দেখা গিয়েছিল আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে। এরপর থেকে ২০ দিন ধরে তাঁর দেখা পাচ্ছেন না নেতা-কর্মীরা। গত বুধবার যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ (২৩ নভেম্বর) চূড়ান্ত হওয়ার পর নেতা-কর্মীদের অনেকে ধারণা করেছিলেন, তিনি সংগঠনের কার্যালয়ে আসবেন। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অসংখ্য নেতা-কর্মী অপেক্ষা করেও তাঁর দেখা পাননি। ফোনেও তাঁকে পাচ্ছেন না তাঁরা।
নভেম্বরে যুবলীগের সম্মেলন হবে—এক সপ্তাহ আগে এই খবর প্রচার হওয়ার পর থেকেই যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিদিন নেতা-কর্মীরা ভিড় করছেন। নাম না প্রকাশের শর্তে যুবলীগের তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক হিসাব তলব ও অনুমতি ছাড়া বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আসার পর ওমর ফারুক চৌধুরী প্রকাশ্যে আসছেন না।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে গত কয়েক দিনে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ওমর ফারুক চৌধুরীকে পাওয়া যায়নি। ধানমন্ডির ৫ নম্বর সড়কে তাঁর প্রতিষ্ঠিত যুব গবেষণা কেন্দ্রের কার্যালয়ে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। গতকাল দুপুরে ওই কার্যালয়ের এক কর্মী জানান, তিনি বেশ কয়েক দিন ধরে এখানে আসছেন না। পরে ধানমন্ডির ৮/এ সড়কে তাঁর বাসায় গেলে নিরাপত্তারক্ষী জানান, তিনি বাসায় আছেন।
এদিকে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে আজ শুক্রবার সকালে বৈঠক ডেকেছে যুবলীগ। সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা বৈঠকে অংশ নেবেন। যুবলীগের সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। এই বৈঠকেও যুবলীগের চেয়ারম্যানের উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানান সংগঠনের দায়িত্বশীল দুজন নেতা।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোচনা করতেই শুক্রবারের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে এতে আলোচনা হবে। এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।
গতকাল বিকেলে যুবলীগ কার্যালয়ে প্রায় ৪০০ নেতা-কর্মী হাজির ছিলেন। সংগঠনের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলেন, কার্যালয়ে এলে নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন চেয়ারম্যান। তাই তিনি কার্যালয়মুখী হচ্ছেন না। তাঁরা বলেন, যুবলীগের দাপট দেখানো দুজন (ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া) গ্রেপ্তার হয়েছেন, পালিয়ে আছেন অনেকে। তবে শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে এবার সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু হওয়ায় সাধারণ কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ এসেছে।
যুবলীগের ইতিহাসে ৫০ বছরের বেশি বয়সী কেউ চেয়ারম্যান হননি। ১৯৭২ সালের নভেম্বরে শেখ ফজুলল হক মণি যখন যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৩২ বছর। আর ওমর ফারুক চৌধুরী যখন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান, তখন তাঁর বয়স ৬৪ বছর। সাত বছর ধরে চেয়ারম্যানের পদে রয়েছেন তিনি। জানা গেছে, তামাকের বিকল্প ‘টেন্ডু পাতা’ বিক্রির মাধ্যমে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু হয়। বিড়ি শ্রমিক লীগ, জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠন যুব সংহতির রাজনীতি করে আসা ওমর ফারুক ২০০৯ সালে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। ২০১২ সালে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটি নয়, সব বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্তই শেষ কথা হয়ে দাঁড়ায়।