রাতে আবরারকে বারবার ফোন দিয়েছিলেন মা
কুষ্টিয়া শহরে আবরারের বাড়িতে পৌঁছেই শোনা গেল তাঁর মায়ের আহাজারি। বলে যাচ্ছিলেন, ‘গতকাল সকালে নিজে গিয়ে ওকে ঢাকার বাসে তুলে দিয়েছিলাম।’ আশপাশের লোকজনের কণ্ঠেও বারবার শোনা যাচ্ছিল আফসোস। পরিবারের সদস্যসহ সবার একটাই কথা, এত মেধাবী, শান্ত ছেলেটিকে কে হত্যা করতে পারে!
গতকাল রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের নিচতলা থেকে আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বুয়েটের হল শাখার ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মারা যাওয়া আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে।
আজ সোমবার সকালে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারের কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মাতম চলছে।
আবরারের হত্যার খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে একটি পক্ষ বলা শুরু করে তিনি শিবিরের কর্মী ছিলেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা অস্বীকার করে জানান, তাঁদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক।
চাচা মিজানুর রহমান বলেন, ‘সে (আবরার) শিবিরের কর্মী, এমন কথা রটাচ্ছে সবাই। এটা বানোয়াট, আমরা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক। হানিফ সাহেবের বিভিন্ন মিটিংয়েও আমরা যাই। আবরার এমনিতে তাবলিগে যেত। বুয়েটে ভর্তির পর দুই-তিনবার সে তাবলিগে গিয়েছিল।’
আবরারের বাবার নাম বরকতুল্লাহ। তিনি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের নিরীক্ষক কর্মকর্তা ছিলেন। মা রোকেয়া খাতুন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার ফাহাদ বড়। ছোট ভাই আবরার ফায়াজ ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেও ঢাকা কলেজের হোস্টেলে থাকে। বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের কাছেই তাঁর হোস্টেল। কুষ্টিয়ার পিটিআই সড়কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাসার পাশেই তাঁদের বাড়ি।
পরিবারের সদস্যেরা জানান, ১০ দিন আগে ছুটিতে দুই ভাই বাড়িতে এসেছিলেন। ২০ তারিখ পর্যন্ত বাড়িতে থাকতে চেয়েছিলেন আবরার। তবে সামনে পরীক্ষা, পড়া হচ্ছে না বলে গতকাল ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
ছেলের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়ে মা রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘গতকাল সকালে আমি তাকে নিজে গিয়ে বাসে তুলে দিই। সে ঢাকায় রওনা দেয়। মাঝে তিন থেকে চারবার ছেলের সঙ্গে কথা হলো আমার। বিকেল পাঁচটায় হলে পৌঁছে ছেলে আমাকে ফোন দেয়। এরপর আর কথা হয়নি। রাতে অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম, ফোন ধরেনি।’
ছোট ভাই বলে, ‘ফোন না ধরায় আমি ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ভাইয়াকে নক করি। ভাইয়া ফেসবুকে অ্যাকটিভ ছিল, তবে সাড়া দেয়নি।’