৩০ সিন্দুকে পাওয়া জুয়ার সরঞ্জাম ধ্বংস করা হবে
রাজধানীর চার ক্লাবের ক্যাসিনোর ৩০টি লকার (সিন্দুক) ভেঙে সেগুলো থেকে টাকা, সরঞ্জাম ও মাদক উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আদালতের অনুমতি নিয়ে মাদক ও ক্যাসিনো যন্ত্র ধ্বংস করা হবে বলে জানা গেছে।
গত ১৮ ও ২২ সেপ্টেম্বর র্যাব–পুলিশ রাজধানীর আটটি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ক্যাসিনো যন্ত্র, জুয়ার বোর্ড, ৩০টি লকার ভেঙে ক্যাসিনো সরঞ্জাম, বিপুল পরিমাণ মাদক ও টাকা জব্দ করে। অভিযানের সঙ্গে যুক্ত র্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, জব্দ করা ৩০ লকার, ডিজিটাল ক্যাসিনো যন্ত্র, বিপুল পরিমাণ জুয়ার সামগ্রী ও মাদক আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধ্বংস করা হবে। এর জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। ক্লাবগুলো থেকে জব্দ করা ৩০ লক্ষাধিক টাকা ইতিমধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস, ঢাকা ওয়ান্ডারাস, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র এবং বনানীর গোল্ডেন ঢাকা ক্লাবের জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে সেগুলো সিলগালা করে দেন। এই চারটি ক্যাসিনো থেকে বিপুল ক্যাসিনো যন্ত্র, জুয়ার বোর্ড, ক্যাসিনো সরঞ্জামাদি, মদ, বিয়ার, ইয়াবা, ২৯ লক্ষাধিক টাকাসহ ১৮২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ইয়ংমেনস ক্লাবের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের বাসা থেকে অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব। কমলাপুরে তাঁর টর্চার সেল থেকে মানুষকে নির্যাতন করার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় খালেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিং আইনে তিনটি এবং টর্চার সেল থেকে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় মতিঝিল থানায় মাদকদ্রব্য আইনে একটি মামলা করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা ওয়ান্ডারাসে গ্রেপ্তার হওয়া তিন কর্মচারীর বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মাদকদ্রব্য আইনে আরেকটি মামলা করে র্যাব।
সেদিন অভিযান চালানো র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের ক্যাসিনোতে ১২টি লকার, ঢাকা ওয়ান্ডারাস ক্লাবে আটটি ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র থেকে আটটি লকার পাওয়া যায়। লকারগুলো থেকে ক্যাসিনো সরঞ্জাম, জুয়ার বোর্ড, টাকা ও বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়। টাকাগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। লকার ও অন্যান্য আলামত তিন মাস পরে ধ্বংস করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো লকার উধাও হয়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
গত ২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে পল্টন ও মতিঝিল থানার পুলিশ যৌথভাবে আরামবাগ, দিলকুশা, মোহামেডান ও ভিক্টোরিয়া ক্লাবে অভিযান চালায়। ভিক্টোরিয়া ক্লাব থেকে জুয়া খেলার ৯টি বোর্ড, ১ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ তাস, জুয়ায় ব্যবহৃত চিপস ও মদ পাওয়া যায়। মোহামেডানে পাওয়া গেছে ২টি লকার, ২টি রুলেট টেবিল, ৯টি বোর্ড, বিপুল পরিমাণ কার্ড, ১১টি ওয়্যারলেস সেট ও ১০টি বিভিন্ন ধরনের ছুরি। আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাবেও বাকারা, রুলেট টেবিলসহ বিভিন্ন জুয়ার সরঞ্জাম পেয়েছে পুলিশ।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম শিবলী নোমান প্রথম আলোকে বলেন, চার ক্লাবে অভিযানে জুয়ার বোর্ড, সরঞ্জামসহ বিভিন্ন মালামাল আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশ।
লোকমান, সেলিম, খালেদ ও শফিকুল রিমান্ডে
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে তৃতীয় দফায় তিন দিন ও অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধানসহ তাঁর দুই সহযোগীকে চার দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীমকে দ্বিতীয় দফায় চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব। অস্ত্র ও মাদক মামলায় ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে বহিষ্কৃত খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া দ্বিতীয় দফায় ১০ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি শফিকুল আলম এবং রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ফু-ওয়াং ক্লাব থেকে গ্রেপ্তার তিন কর্মচারী জাহিদুর রহমান মিয়া, চঞ্চল পালমা ও জেরি ডিক আট দিন করে রিমান্ডে রয়েছেন।