মোহামেডান ক্লাবের ক্যাসিনোর খবর আগেই জানত মতিঝিল থানা
মোহামেডান ক্লাবে ‘অবৈধ ক্যাসিনো’ চলার কথা জানত ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ১৪ মাস আগে মোহামেডান ক্লাবের সভাপতিকে দেওয়া মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওমর ফারুকের এক চিঠিতে ক্যাসিনো থাকার বিষয়টি যে পুলিশ জানে তা নিশ্চিত হওয়া যায়।
শুধু মোহামেডান ক্লাব নয়, মতিঝিলের অন্তত ছয়টি ক্লাবে কয়েক বছর ধরে ক্যাসিনো চলার তথ্য জানার পরও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গত বছরের ১০ জুলাই মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক মোহামেডান ক্লাবের সভাপতিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘মোহামেডান ক্লাবে ক্যাসিনো নামক খেলা পরিচালিত হচ্ছে। ক্যাসিনো নামক খেলা পরিচালনা করার জন্য যে সকল বৈধ কাগজপত্র আছে, তা তদন্তের প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে থানায় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’
ওসি ওমর ফারুক গতকাল শনিবার প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, মতিঝিলের ক্লাবগুলোয় ক্যাসিনো চলার কথা আগে তিনি মোটেও জানতেন না। ক্যাসিনোর সম্পর্কে আগে তাঁর কোনো ধারণাই ছিল না। র্যাব যখন গত সপ্তাহে অভিযান চালিয়ে দুটি ক্লাব থেকে ক্যাসিনো বোর্ড উদ্ধার করে, তখন বিষয়টি তিনি জানেন।
রোববার এই চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি ফারুক বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ক্লাবগুলোকে গত বছর চিঠি দিয়েছিলাম। তবে ক্যাসিনো চলার তথ্য আমি জানতাম না। তখন ক্লাবে জুয়া খেলা বন্ধ করেছিলাম।’
র্যাব গত সপ্তাহে মতিঝিল থানার পেছনে ওয়ান্ডারার্স ও ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনো বোর্ড উদ্ধার করে। ক্লাবে পাওয়া যায় মাদকদ্রব্য। এ ঘটনায় র্যাবের পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় মামলাও করা হয়। আর রোববার মতিঝিলের মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর বোর্ডসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ।
ওয়ান্ডারার্স ও ফকিরাপুল ইয়ংমেনসে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেওয়ার পর মতিঝিলের বাকি ক্লাবগুলোতে তালা মেরে দেয় ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এরপর ওই সব ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন মতিঝিল থানা-পুলিশের সদস্যরা। রোববার দুপুর থেকে সন্ধ্যা নাগাদ মতিঝিল এলাকার মোহামেডান ক্লাব, ভিক্টোরিয়া ক্লাব, দিলকুশা ও আরামবাগ ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ১২টি ক্যাসিনো বোর্ডসহ বিপুল পরিমাণ জুয়ার সামগ্রী উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মতিঝিল জোনের অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) শিবলী নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘র্যাব যেহেতু এই চারটি ক্লাবে অভিযান চালায়নি সে জন্য এই চারটি ক্লাবে আজ অভিযান চালানো হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, এখানে জুয়ার সামগ্রী আছে, সে জন্য অভিযান চালিয়েছি।’ ক্যাসিনো চলার কথা আগে জানতেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে এডিসি শিবলী নোমান বলেন, ‘ক্লাবগুলো খেলাধুলার জায়গা। এখানে ফুটবল খেলা হবে, ভলিবল খেলা হবে। এখানে খেলোয়াড়েরা থাকবেন। কিন্তু এখানে জুয়া চলবে, তা তো হওয়ার কথা না। আমরা ক্লাবপাড়াতে ঢুকি না। ক্যাসিনো চলার কথা আমরা জানতাম না। আমাদের ধারণা ছিল না।’
পুলিশ কি কিছুই জানত না? এই প্রশ্নের জবাবে শিবলী নোমান বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকেরা তো প্রচুর ঘোরাফেরা করেন। আপনাদের কি মনে হয়নি, এগুলো আছে। আপনারা যদি ইনফরমেশন (তথ্য) আমাকে দিতেন, আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম। এখন অভিযান চালিয়েছি। ক্লাবগুলোতে প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি আছেন। তাঁদের মাধ্যমে আমরা খোঁজ নেব, তাঁরা কাদেরকে দিয়ে এই ব্যবসা চালিয়েছেন।’
রোববার বিকেলে ভিক্টোরিয়া ক্লাবে অভিযান চলার সময় মতিঝিল জোনের উপকমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা জানতেন না বা জেনে চুপ ছিলেন, এর কোনোটাই সঠিক না। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।