যে কারণে বিমানে আসছে আরও দুটি উড়োজাহাজ
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে বোয়িংয়ের দশটি নতুন উড়োজাহাজ চলে এসেছে। রাজহংস নামের বোয়িং ৭৮৭-৮ মডেলের উড়োজাহাজটি ছিল সর্বশেষ সংযোজন। তবে এতেই থামছে না বিমানের নতুন উড়োজাহাজ কেনার প্রক্রিয়া। যাত্রীসেবা বাড়াতে ও প্রতিযোগিতার বিশ্ববাজারে টিকে থাকার জন্য বিমান আরও নতুন নতুন উড়োজাহাজ কিনতে যাচ্ছে।
রাজহংস উদ্বোধনের পর ১৭ সেপ্টেম্বর আরও দুটি উড়োজাহাজ কেনার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন তিনি বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি, বোয়িং আরও দুটি বিমান বিক্রি করবে। এখন পর্যন্ত কেউ এর অর্ডার দেয়নি। সুযোগটা আমরা নেব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ঘোষণার পরপরই বিমানবহরে নতুন উড়োজাহাজ কেনার প্রক্রিয়া বেশ জোরেশোরেই শুরু হয়েছে। কিন্তু চাইলেই এত সহজে নতুন উড়োজাহাজ হাতের নাগালে আসে না। তবে সুযোগটা এসে গেছে। আর এর কারণ হচ্ছে, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ। এ বাণিজ্যযুদ্ধের ফায়দাই এখন নিতে চাচ্ছে বিমান। এ কথা জানিয়েছেন বিমানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা; যিনি রাজহংসকে আনতে বিমানের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বোয়িংয়ের ডেলিভারি সেন্টার সিয়াটলে গিয়েছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যখন সিয়াটলে যাই, তখনই শুনতে পারি বোয়িংয়ের কয়েকটি উড়োজাহাজের অর্ডার বাতিল হয়েছে। পরে জানা যায়, চীনের হেইনান এয়ারলাইনস এসব উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি বাতিল করেছে। এর কারণ কী—জানতে চাইলে বিমানের ওই কর্মকর্তা বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে হেইনান এয়ারলাইনস তাদের এই ক্রয় আদেশ বাতিল করেছে।’
এ দিকে ওয়েবসাইট থেকে হেইনান এয়ারলাইনস সম্পর্কে জানা যায়, এটি চীনের অন্যতম বৃহৎ বেসামরিক বিমান সংস্থা। চীনা বিমান সংস্থার মধ্যে এর অবস্থান চতুর্থ। হেইনান এয়ারলাইনসের বহরে রয়েছে ২৩৮টি অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ। ১১০টি গন্তব্যে যাত্রী বহন করে বিমান সংস্থাটি। হেইনান এয়ারলাইনস বহরে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ রয়েছে ২০০টি। এর মধ্যে বেশ কটি ড্রিমলাইনার রয়েছে। নতুন করে আরও ৭৬টি উড়োজাহাজ কেনার অর্ডার দিয়েছে তারা। এর ২৮টি ড্রিমলাইনার বোয়িং ৭৮৭-৯ মডেলের উড়োজাহাজ ছিল। কিন্তু মার্কিনদের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীনা বিমান সংস্থাটি বোয়িংয়ের কাছ থেকে উড়োজাহাজ কেনা বন্ধ করেছে। আর এ কারণেই বোয়িং কোম্পানির কাছে রয়েছে বেশ কয়েকটি ড্রিমলাইনার।
গত মঙ্গলবার রাজহংস উদ্বোধনের সময় বোয়িংয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলাকা ভবনে ছিলেন। তাঁরাই দুটি ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯ কেনার প্রস্তাব বিমানকে দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা সরকারের একজন উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুটি বোয়িং উড়োজাহাজ রয়েছে বলে জানাই। এ কথা শুনেই তিনি এক মুহূর্তে দেরি করেননি। সঙ্গে সঙ্গেই উড়োজাহাজ দুটি কেনার কথা আমাদের জানান।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নতুন দুটি উড়োজাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি। এখন দর-কষাকষি চলছে।’ এ ছাড়া বুধবার বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোকাব্বির হোসেন নতুন উড়োজাহাজ কেনার কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছিলেন। এ দুটি উড়োজাহাজ যাত্রীবাহী হবে বলেও তিনি জানান।
ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বোয়িং কোম্পানি তিনটি মডেলের ড্রিমলাইনার তৈরি করছে। একটি হলো ৭৮৭-৮। এই মডেলের উড়োজাহাজে ২৭১ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারেন। এর দৈর্ঘ্য ১৮১ ফুট। এর মূল্য প্রায় ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। একটানা সাড়ে ১৩ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে পারে এটি। এরপর রয়েছে ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯ মডেলের উড়োজাহাজ। এর দৈর্ঘ্য ২০৬ ফুট। এর একটি উড়োজাহাজের মূল্য প্রায় ২ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। এটি ৩০০ যাত্রী বহন করতে পারে। এটি টানা প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার উড়তে পারে। ড্রিমলাইনারের সর্বশেষ মডেল হলো ৭৮৭-১০। এর দাম প্রায় ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এটি সাড়ে তিন শ যাত্রী বহন করতে পারে। একটানা এটি উড়তে পারে প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার।
এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ বিমানের পাইলটসহ বেশ কয়েকজন অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। তাঁরা জানান, এটি বিমানের জন্য বিরাট সুযোগ। কারণ, উড়োজাহাজের অর্ডার দিলেও ডেলিভারি সিরিয়াল পেতে বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয়।
বিমানের এক পাইলট প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যে চারটি ড্রিমলাইনার পেয়েছি, এগুলোর ডেলিভারি নির্ধারিত সময় ছিল আরও কয়েক বছর পর। কিন্তু একটি কোম্পানি ড্রিমলাইনার কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় বিমান নির্ধারিত সময়ের কয়েক বছর আগেই চারটি ড্রিমলাইনার হাতে পেয়েছে।’