টাকা ভাগাভাগির নতুন অডিও
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে টাকা ভাগাভাগির বিষয়ে ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
অডিওতে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম উপস্থিত থেকে ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে এক কোটি টাকা ভাগ করে দিয়েছেন বলে রাব্বানীকে জানান সাদ্দাম। সেই ভাগ থেকে ২৫ লাখ টাকা পেয়েছেন সাদ্দাম ও তাঁর অনুসারীরা।
এর আগে এ নিয়ে সাদ্দামের আরেকটি মুঠোফোন কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ায়।
‘অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন উপাচার্য’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে উপাচার্য ‘মিথ্যাচার’ করেছেন বলে দাবি করে শিক্ষার্থীদের একাংশ গতকাল রোববার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে। তাঁদের অভিযোগ, এখন নিজের দুর্নীতি ঢাকতে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন উপাচার্য।
এ বিষয়ে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম গত শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘অর্থ লেনদেনের বিষয়টি বানোয়াট গল্প। এ বিষয়ে আমি বলব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে, মাননীয় আচার্যকে তদন্ত করতে। আমি তাঁদের কাছে যাব। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের মধ্যস্থতায় ছাত্রলীগের নেতাদের বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তদন্তের দাবি করে যাচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এ ছাড়া ‘পূর্ণাঙ্গ মহাপরিকল্পনা’ ছাড়াই এসব উন্নয়নকাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে বলেও দাবি তাঁদের। এসব বিষয় নিয়ে কয়েক দিন ধরেই চলছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। গত বৃহস্পতিবার উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের পর এসব বিষয় নিয়ে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৈঠকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগকে টাকা দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে আগামী বুধবার পর্যন্ত সময় নিয়েছিলেন উপাচার্য। পরে গত শনিবার দুপুরে উপাচার্য সাংবাদিকদের কাছে তদন্তের সময় নেওয়া ও আন্দোলনকারীদের বিষয়ে মিথ্যাচার করেছেন অভিযোগ তুলে গতকাল আবারও আন্দোলন শুরু করেছে শিক্ষার্থীদের একাংশ।
গতকাল রোববার বেলা একটার দিকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। পরে মুরাদ চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের কার্যকরী সদস্য রাকিবুল হক বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের বলেছিলেন তাঁর তিন দিন সময় লাগবে, আমরা সময় দিয়েছি। কিন্তু গত শনিবার তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে তিনি সময় নিয়েছেন নিজেই নিজের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় কি না, সে বিষয়ে জানতে। তিন বলেছেন, আমরা নাকি উন্নয়নবিরোধী এবং তাঁকে দুর্নীতিবাজ বানানোর চেষ্টা করছি। এই নির্লজ্জ মিথ্যাচার আমরা মানি না।’
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মারুফ বিন মোজাম্মেল বলেন, ‘যে দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের পদত্যাগ করতে হয়, সেই দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত অবশ্যই করতে হবে।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান বলেন, ‘উপাচার্যের কাছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ টাকা দাবি করেছে, সেটা তিনি এত দিন কেন প্রকাশ করেননি? দুজন ব্যক্তি বাসায় এসে চাঁদা দাবি করল আর তিনি সেটি চেপে গেলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কেন তিনি আইনি ব্যবস্থা নিলেন না? এত দিন পর কি নিজের দুর্নীতি ঢাকতে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দিলেন তিনি? আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর চাই।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখপাত্র আরমানুল ইসলাম খান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।