মাদক কারবারিদের নতুন পথ রৌমারী-রাজীবপুর সীমান্ত
মাদক কারবারিদের নতুন পথ হয়ে উঠেছে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত। প্রতিনিয়ত ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে। গত দুই মাসে দেওয়ানগঞ্জ থানার পুলিশ ২৮ হাজার ৮৪৪টি ইয়াবা বড়ি জব্দ করেছে।
জুলাই মাস থেকে হঠাৎ কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুর থেকে জামালপুর হয়ে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস ও বিভিন্ন যানবাহনে ইয়াবা বড়ির বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। এই পথে হঠাৎ ইয়াবা চালানের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের ভাবিয়ে তুলেছে। তাঁদের কড়া নজরদারির কারণে প্রায় দিনই ইয়াবার চালান জব্দ হচ্ছে। এসব ইয়াবা জামালপুর থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে।
পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেনের ভাষ্য, ‘ভারত থেকে ইয়াবা পাচারের বিষয়টি আমাদের একটু ভাবিয়েই তুলেছে। তবে আমাদের ব্যাপক তৎপরতায় পাচারকারীরা সুবিধা করতে পারছে না। প্রতিনিয়ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তারা গ্রেপ্তার হচ্ছে।’
পুলিশ সুপার জানান, বিষয়টি নিয়ে গত ২১ আগস্ট ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মেঘালয়ের শিলং শহরের হোটেল পাইন উডে বাংলাদেশের ১৪ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ে একটি সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে। সেখানে দুই দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সম্মেলনে তিনি ভারতের সীমান্তে ইয়াবা পাচারের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি তারা দেখবে।
দেওয়ানগঞ্জ থানা সূত্র জানায়, জুলাই থেকে গত রোববার পর্যন্ত ২৮ হাজার ৮৪৪টি ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়েছে। ৪১টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫৭ জন। এ ছাড়া ১৫ কেজি ৬৬৫ গ্রাম গাঁজা জব্দ করা হয়। জব্দকৃত মাদকের মূল্য ৮৭ লাখ টাকা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেওয়ানগঞ্জের পাথরের চর, বাঘারচর, তারাটিয়া এলাকায় ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে। এ ছাড়া রাজীবপুর এলাকার খেয়ারচর, দাঁতভাঙা ও আগলার চর এলাকার ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার বড় বড় চালান ঢুকছে দেশে। মাদক কারবারিরা এসব চালান যাত্রীবাহী বাস ও বিভিন্ন যানবাহনে করে জামালপুর হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছেন।
দেওয়ানগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এম ময়নুল ইসলাম বলেন, আগে রৌমারী-রাজীবপুর হয়ে জামালপুরে ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ আসত। তবে হঠাৎ করে জুলাই থেকে এ পথে ইয়াবা আসতে শুরু করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভারতীয় অন্য সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি থাকায় মাদক কারবারিরা হঠাৎ পথ পরিবর্তন করে এ সীমান্তকে বেছে নিয়েছেন। এসব ইয়াবা ভারত থেকে আসছে। অনেক সময় রৌমারী-রাজীবপুর সীমান্ত আবার জামালপুরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মাদক কারবারিরা ইয়াবার চালান নিয়ে আসেন। পুলিশের এই পথে ব্যাপক নজরদারি রয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, এ অঞ্চলের দুই দেশের সীমান্তে আগে যাঁরা হেরোইন, ফেনসিডিল ও ভারতীয় মদ আনা-নেওয়া করতেন, তাঁরাই এখন ইয়াবা আনা-নেওয়া করছেন। অন্য সীমান্ত ছেড়ে ইয়াবা পাচারের জন্য মাদক কারবারিরা এখন জামালপুর ও রৌমারীর সীমান্ত ব্যবহার করছেন। তবে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতার কারণে তাঁরা মাদকসহ গ্রেপ্তার হচ্ছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘একটু ভাবনার বিষয়, এসব ইয়াবা ভারত থেকেই কিন্তু আসছে। এর সঙ্গে ভারতীয় ও বাংলাদেশি মাদক কারবারিরা জড়িত। বাংলাদেশে আমরা কয়েকজন গডফাদারের নামও ইতিমধ্যে পেয়েছি। এ পথে সার্বক্ষণিক আমাদের নজরদারি রয়েছে।’