মিথ্যা তথ্যে 'মুক্তিযোদ্ধা কোটায়' চাকরি, অবশেষে ধরা
পিতার সনদ দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরি নিয়েছিলেন দুই ভাই ও এক বোন। দুজন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) এবং একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ছয় বছর ধরে তাঁরা চাকরি করছেন। ইতিমধ্যে চাকরিও স্থায়ী হয়েছে। কিন্তু ওই সনদই বুমেরাং হয়েছে তাঁদের জন্য। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে ওই মুক্তিযোদ্ধা সনদে থাকা বিভিন্ন স্বাক্ষর ভুয়া ও জাল প্রমাণ হয়েছে। আর তাই বাবা ও তিন সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংস্থাটি।
পাবনার বাসিন্দা ডা. মো. ইসমাইল হোসেনের ছেলে মো. সালাহউদ্দিন আল-মামুন ২০১২ সালের ২৮ জুন পুলিশের এসআই পদে নিয়োগের জন্য রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) বরাবর আবেদন করেন। আবেদনপত্রে অন্য কাগজপত্রের সঙ্গে তাঁর পিতার নামে থাকা মুক্তিযোদ্ধার একটি সনদও জমা দেন। ওই সনদের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর পুলিশে যোগ দেন। ২০১৪ সালের ৩ ডিসেম্বর এসআই হিসেবে বগুড়ার গাবতলী মডেল থানায় যোগ দেন। বর্তমানে তিনি নওগাঁর আত্রাই থানায় কর্মরত।
ইসমাইল হোসেনের আরেক ছেলে মো. শাহাবউদ্দিন ২০১২ সালে একই সনদ দেখিয়ে এসআই পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করে নিয়োগ পান। ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর এসআই পদে স্থায়ী নিয়োগ পান। বর্তমানে তিনি রাজশাহীর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত।
ইসমাইল হোসেনের তৃতীয় সন্তান মোছাম্মৎ রুখসানা ইয়াসমিন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২০১২ সালের ৩ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক হিসেবে আবেদন করে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পাবনার চাটমোহরে ৫০ নম্বর সোন্দভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পান। বর্তমানে তিনি ওই স্কুলেই কর্মরত। এ ক্ষেত্রেও তিনি বাবার সনদ দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পান।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মো. ইসমাইল হোসেনের কাছে থাকা মুক্তিযোদ্ধার সনদের ক্রমিক নম্বর ৫২৭৯৯, যা ২০০১ সালের ১২ জানুয়ারি ইস্যু করা হয়েছে বলে দেখা গেছে। ওই সনদে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান আবদুল আহাদ চৌধুরীর স্বাক্ষর রয়েছে, যেটিও জাল। এ ছাড়া আছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পৃষ্ঠপোষক ও প্রধান উপদেষ্টা শেখ হাসিনার প্রতিস্বাক্ষর। সনদে তিনি পাবনার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ দুদকের যাচাই-বাছাইয়ে সব তথ্য জাল ও ভুয়া বলে প্রমাণ হয়েছে। এই সনদ সম্পর্কে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
দুদকের অনুসন্ধানে ইসমাইল হোসেন ও তাঁর ওই তিন সন্তান অন্যায়ভাবে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার জন্য প্রতারণা-জালিয়াতির মাধ্যমে সংগৃহীত মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়া জেনেশুনে ভুয়া সনদকে খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায়’ চাকরি নিয়ে ও চাকরিতে কর্মরত থেকে বেতন-ভাতা ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধাদি গ্রহণ করে অপরাধ করেছেন। ইসমাইল হোসেনের তিন সন্তান জেনেশুনে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করে চাকরি নিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধাদি ভোগ করে আসছেন।
এ ঘটনায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে গত ২৮ আগস্ট সংস্থার পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ইসমাইল হোসেন ও তাঁর তিন সন্তানকে আসামি করে মামলা করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। তাঁদের বিরুদ্ধে ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ দণ্ডবিধি এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।