গণিত শিক্ষকের বনসাই প্রেম
রূপসী বাংলার পথঘাটের হিজল, তমালের দেখা মিলবে এখানে। পুকুরপাড়ে বিলের মাঝে ছায়াদানকারী তেঁতুল, অশ্বত্থ এবং বটও মিলবে। গ্রামের পাকুড় কিংবা সুন্দরবনের গেওয়া কী নেই এখানে। সারি সারি গাছে ভর্তি পুরো ছাদ। আর নিবিষ্ট মনে এসব গাছের পরিচর্যা করে যাচ্ছেন শিক্ষক মো. আরিফুর রহমান।
এ যেন গণিতের শিক্ষকের বনসাই প্রেম। তাঁর ভাষায় বনসাই হলো ‘লিভিং আর্ট’ বা অসমাপ্ত শিল্প। বড় বড় গাছকে বনসাই করে ছোট ছোট আকৃতি দেওয়া যায়। এই কাজটিকে শিল্প হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন আরিফুর রহমান।
নগরের নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক আরিফুর রহমান। শেরশাহ কলোনি এলাকায় নিজ ভবনের ছাদে গড়ে তুলেছেন এই বনসাই বাগান। ৪০ প্রজাতির দেশি–বিদেশি বনসাই রয়েছে তাঁর। ২০১৪ সাল থেকে তাঁর এই নেশার শুরু। ঢাকা, চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশ–বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তিনি বনসাই সংগ্রহ করে সমৃদ্ধ করেছেন তাঁর ছাদবাগান। আরিফের বাড়ি ফেনীতে।
‘ছোটবেলায় বাড়িতে মায়ের সঙ্গে গাছপালার পরিচর্যা করতাম। সেই থেকে গাছের প্রতি ভালোবাসা। ২০১৪ সালে বনসাই নিয়ে কাজ শুরু করি। এখন এটাই আমার নেশা। একটি গাছকে নানা আকৃতি দেওয়া যায়। এটা একটা শিল্প।’ বনসাই প্রেমের কারণ ব্যাখ্যা করলেন আরিফ।
প্রতিদিন নিয়ম করে আরিফুর রহমান সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বাগানে সময় দেন। এরপর বিদ্যালয়ে চলে যান। সেখান থেকে ফিরেও আবারও যান বাগানে। ছুটির দিনে বেশির ভাগ সময় ছাদেই কাটান। একসময় অনেক ছাত্র পড়াতেন। বনসাইয়ের নেশায় এখন প্রাইভেট পড়ানো ছেড়ে দিয়েছেন আরিফ।
এই ছাদে রয়েছে নানা প্রজাতির বট, অশ্বত্থ, আম ইত্যাদি গাছ। এ ছাড়া চিনের এলম, প্রেসনা, ভিয়েতনামের বারবাডোস চেরি, সিঙ্গাপুরের রাইটিয়া, মরুর জেট প্লান্ট, নানা রকম বাগানবিলাসের একাধিক গাছ আছে। এই বাগানের মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা বলে জানালেন আরিফুর রহমান। তিনি কলম ও কাটিং করে গাছের বংশবৃদ্ধি করেন। তাঁকে এই কাজে মাঝেমধ্যে সঙ্গ দেন ছোট ছেলে সপ্তম শ্রেণির আদিব শারার।
ছয়তলা ভবনের ছাদটিও তৈরি করা হয়েছে বাগানের উপযোগী করে। ছয় বছরে বনসাইয়ের দুটি প্রদর্শনীও করে ফেলেছেন আরিফ। গত বছরের প্রদর্শনীতে ৪০ হাজার টাকা গাছ বিক্রি করেছিলেন। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর শিল্পকলায় আবার দুদিনের প্রদর্শনী করবেন। তাঁর মতে, বনসাই বাগান করতে অনেক ধৈর্য এবং পড়ালেখা দরকার। এ জন্য বাগানিরা মিলে নিজেদের মধ্যে কর্মশালা করেন।
আরিফ বলেন, ‘এই ছাদবাগান আমার বাড়ি শীতল রাখছে। অক্সিজেন দিচ্ছে। আর এটা একটা শিল্প।’