কালভার্টের মুখ ভরাট করে ফিলিং স্টেশন
নরসিংদীর রায়পুরায় কালভার্টের মুখ ভরাট করে একটি এলপিজি ফিলিং স্টেশন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এতে এলাকার পানিনিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। আশপাশের কয়েক গ্রামের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ঘটনাটি রায়পুরা উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের খানাবাড়ি রেলস্টেশনের পূর্ব পাশের এলাকার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খানাবাড়ি রেলস্টেশন–সংলগ্ন প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে মোট আটটি কালভার্ট রয়েছে। এগুলো দিয়ে মির্জানগর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের পানি নিষ্কাশিত হয়। বর্ষার সময় ইউনিয়নটির পূর্বকান্দী, বাহেরচর, টেকপাড়া, হুগলাকান্দী, মির্জানগর ও উত্তর মির্জানগর গ্রামের পানি এসব কালভার্ট দিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদে চলে যায়। কৃষিপ্রধান অঞ্চলটির কৃষকেরা সবজি চাষের ওপর নির্ভরশীল। রেলগেটের মোড়ের এই কালভার্ট ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখানকার কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় আছেন। দুই পাশে ইটের দেয়াল দিয়ে কালভার্টের মুখ ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ফেমাস অটো গ্যাস ফিলিং অ্যান্ড কনভারশন (প্রস্তাবিত) নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, প্রস্তাবিত ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি মোবারক নামের একজনের জায়গা দখল করে ওই ফিলিং স্টেশন নির্মাণের জন্য বালু ভরাট করেছেন। টাকা ছড়িয়ে ও ক্ষমতাসীন নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে এমন পরিবেশ ও জনস্বার্থবিরোধী কাজ করা হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, মির্জানগর, উত্তর মির্জানগর, নয়াহাটি, বাঙ্গালী নগর ও বাহেরচর গ্রামের বর্ষার পানি খানাবাড়ি রেলস্টেশনের পূর্ব পাশের এই কালভার্টগুলোর মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কালভার্টটি বালু দিয়ে ভরাট করে সেখানে ফিলিং স্টেশন করা হচ্ছে। এ কারণে গ্রামগুলোর পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে। এতে করে দুর্ভোগ পোহাতে হবে কৃষকসহ স্থানীয় লোকজনের। গ্রামবাসীর স্বার্থে এই কালভার্টের মুখ সম্পূর্ণ খুলে দিয়ে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা দরকার।
জমির মালিক মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমার জমিতে ফিলিং স্টেশন করার জন্য তিন লাখ টাকা দেওয়ার সমঝোতা করা হয়েছিল। কিন্তু এই টাকা এখনো পাইনি। আমি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছি বলে এই টাকা নাকি এখন আর দেওয়া হবে না।’
মির্জানগর গ্রামের কৃষক আবু তাহের বলেন, ‘এই কালভার্ট বন্ধ করে ফেলায় ওই পাড়ের পানি এই পাড়ে আসতে পারে না। পানি ঠিকমতো না আসায় ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। এ ছাড়া এলাকায় তাঁর (সাইফুল) প্রভাব থাকায় তাঁকে কিছু বলতেও সাহস পাচ্ছে না কেউ।’
জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অনুমতি নিয়েই এখানে ফিলিং স্টেশন নির্মাণ করছি।’ কার অনুমতি নিয়েছেন জানতে চাইলে এ বিষয়ে দেখা করে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। এ ছাড়া জায়গা দখল করার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে মির্জানগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সবকিছু জেনে-বুঝেই ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কালভার্টের মুখ পুরোটা ভরাট করা হয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, পরিবেশ আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি কালভার্ট বা জলাধার বন্ধ করে কোনো প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা নির্মাণ করতে পারেন না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।