আজ ১৭ আগস্ট। ২০০৫ সালের এই দিনে দেশের ৬৩ জেলায় ৫০০ স্থানে বোমা ফাটিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছিল জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ১৪ বছর আগের সেই ঘটনায় করা মামলাগুলোর মধ্যে ৫৯ মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। একইভাবে নির্মূল করা যায়নি নিষিদ্ধঘোষিত এই জঙ্গি সংগঠনকে।
যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, নির্মূল করা না গেলেও জেএমবির সাংগঠনিক অবস্থা এখন অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। বড় ধরনের হামলা করার সামর্থ্য এখন তাদের নেই। বিচ্ছিন্ন কিছু করার চেষ্টা করতে পারে।
সৌদি আরবে লেখাপড়া করা জামালপুরের শায়খ আবদুর রহমানের নেতৃত্বে সালাফি মতাদর্শী জঙ্গি সংগঠন জেএমবির জন্ম ১৯৯৮ সালে। তবে সংগঠনটির নাম ব্যাপকভাবে জানাজানি হয় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার ঘটনায়। এরপর জঙ্গিবিরোধী ব্যাপক অভিযানে নামে পুলিশ ও র্যাব। ছয় মাসের মধ্যে শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ জেএমবির তখনকার শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই গ্রেপ্তার হন। শীর্ষ পাঁচ নেতার ফাঁসির রায় হয়, যা কার্যকর হয় ২০১৭ সালে।
র্যাব সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ১৬১টি মামলা হয়। মোট আসামির সংখ্যা ৬৬০। পরে এসব মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৪৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। এঁদের মধ্যে ৩৫ জন বিভিন্ন সময় জামিনে মুক্তি পান। এখনো পলাতক আছেন ৫০ আসামি।
১৭ আগস্টের ঘটনায় করা মামলাগুলোর মধ্যে আসামিদের শনাক্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করতে না পারায় ১০ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। বাকি ১৪৯টি মামলায় ১ হাজার ১০৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
র্যাবের সদর দপ্তর সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ১০২ মামলার রায় হয়েছে। এতে ২৪৭ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। এঁদের মধ্যে ১৫ জনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। এসব মামলা থেকে খালাস পান ১১৮ জন। ৫৯টি মামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীতে হওয়া ১৬ মামলার মধ্যে ৯টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। ২টি মামলার রায় হয়েছে। বাকি ৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, সময়মতো সাক্ষী হাজির না হওয়াটা মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায়। তিনি আশা করছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাকি মামলাগুলোর বিচার নিষ্পত্তি হবে।
>দেশব্যাপী বোমা হামলার ১৪ বছর
জেএমবির সাংগঠনিক অবস্থা এখন দুর্বল
বিচ্ছিন্নভাবে কোনো অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে
এদিকে গত ১৪ বছরে নানা হাত ঘুরে জেএমবির নেতৃত্ব এখন পলাতক জঙ্গি সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিনের হাতে। ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীনসহ তিন জঙ্গিনেতাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল জেএমবির সদস্যরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, সালাহউদ্দিন এখন ভারতে আছেন। তাঁর নেতৃত্বে জেএমবি ভারতেও কার্যক্রম বিস্তার করেছে। ভারতে তৎপর অংশের নাম দেওয়া হয়েছে জেএমআই বা জামাআতুল মুজাহিদীন ইন্ডিয়া। গত কয়েক বছরে জেএমবি বাংলাদেশে বড় কোনো ঘটনা ঘটাতে না পারলেও ২০১৪ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পর জেএমবি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। এরপর ভারতে বেশ কয়েকজন জেএমবির সদস্য গ্রেপ্তার হয়। যাদের মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের নাগরিক রয়েছে।
ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের সূত্র বলছে, জেএমবি এখন পুরোনো কর্মীদের একত্র করার চেষ্টা করছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, জেএমবির সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে গেছে। এর নেতা-কর্মী ও অর্থদাতাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গিরা বিচ্ছিন্নভাবে হামলার করার সুযোগ খুঁজছে। তাদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে র্যাব সদর দপ্তরে সাইবার মনিটরিং কেন্দ্র করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।