উখিয়া ও টেকনাফে পাহাড়ধস ঠেকাতে 'সেফ প্লাস'
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের বসতি গড়ে উঠেছে পাহাড়ের চূড়া ও ঢালুতে। ফলে টানা বৃষ্টি হলেই পাহাড়ধস হয়। শিবিরে পাহাড়ধসের ঝুঁকি কমাতে তিন বছর মেয়াদি ‘সেফ প্লাস’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে জাতিসংঘের তিনটি সংস্থা। বনায়নের পাশাপাশি বনাঞ্চল উজাড় ঠেকাতে তারা জ্বালানি কাঠের বিকল্প হিসেবে রোহিঙ্গা পরিবারে সরবরাহ দিচ্ছে এলপিজি গ্যাস।
২০১৮ সালের মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), কৃষি ও খাদ্যবিষয়ক সংস্থা (এফএও) ও বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হয়। বর্তমানের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫৩ জন।
সম্প্রতি উখিয়ার কুতুপালং, মধুরছড়া, জুমশিয়া ও বালুখালী শিবির ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ের ঢালুতে লাগানো হচ্ছে নিম, সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। বৃষ্টির পানিতে যেন পাহাড়ধস না হয় তার জন্য ঢালুতে বাঁশের বেড়া দিয়ে মাটি আটকে সৃজিত হচ্ছে সবুজ ঘাস ও গাছপালা।
মধুরছড়ায় পাহাড়ের ঢালুতে ঝুপড়ি ঘরে পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন রোহিঙ্গা রহিম উল্লাহ। তাঁর ঘরের চারপাশে লাগানো হয়েছে ১০-১২টি নিম ও সেগুনগাছ। গাছগুলোর উচ্চতা পাঁচ থেকে আট ফুট।
রহিম উল্লাহ (৫৫) বলেন, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই শিবিরে এসে তিনি বড় বড় গাছপালায় ভরপুর বনাঞ্চল দেখতে পান। রোহিঙ্গারাই গাছপালা উজাড় ও পাহাড় কেটে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছিল। এখন কয়েক হাজার একরের বিশাল শিবির এলাকার কোথাও গাছপালা নেই। প্রচণ্ড গরমে যেমন ত্রাহি অবস্থা, তেমনি ভারী বৃষ্টিতে আতঙ্কে থাকতে হয়।।
কুতুপালং ও বালুখালী শিবিরের বাসিন্দা আজমত উল্লাহ ও সলিম উল্লাহ বললেন, ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তাঁরা বনাঞ্চল থেকে কাঠ সংগ্রহ করে জ্বালানির চাহিদা পূরণ করেছিলেন। এখন কাঠের বিকল্প হিসেবে তাঁরা ইঞ্জিল চুলা (এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার) ব্যবহার করছেন। জাতিসংঘ বিনা মূল্যে তাঁদের এলপিজি দিচ্ছে।
আইওএম-এর তথ্যমতে, রোহিঙ্গা বসতির কারণে উখিয়া ও টেকনাফের ৮ হাজার একর বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে গাছবিহীন শিবিরে ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসের আশঙ্কা আছে।
এ জন্য জ্বালানি কাঠের চাহিদা কমিয়ে আনতে সেফ প্লাস কর্মসূচি গ্রহণ করে বনায়নের পাশাপাশি শরণার্থী ও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে গ্যাসের চুলা, এলপিজি গ্যাসের পাশাপাশি সিলিন্ডার দিচ্ছে। এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৫ হাজার পরিবারকে এলপিজি সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
সেফ প্লাস-এর আইওএম ইউনিটের প্রধান প্যাট্রিক কেরিগনন বলেন, এখন পর্যন্ত এই কর্মসূচি খুবই সফল। কিন্তু তিন বছর মেয়াদি এই কর্মপরিকল্পনার জন্য ৩০ শতাংশেরও কম অর্থ সাহায্য পাওয়া গেছে।
ডব্লিউএফপির তথ্যমতে, উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় ৬০ লাখ চারাগাছ রোপণের কর্মসূচি চলছে। ইতিমধ্যে ৩ লাখ চারা রোপণ হয়েছে। তিন বছরে লাগানো হবে প্রায় ৬০ লাখ চারা।