রিফাত হত্যায় ব্যবহৃত রামদা উদ্ধার

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রামদা উদ্ধার করা হয়েছে। রিমান্ডে থাকা হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মূল হোতা রিফাত ফরাজীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আজ সোমবার সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের কলাভবনের পেছনের পরিত্যক্ত একটি ডোবা থেকে রামদাটি উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, রিফাত ফরাজীকে গত ৩ জুলাই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় রামদাটি ব্যবহার করেন রিফাত ফরাজী। রিফাত শরীফকে কোপানোর পর রামদাটি ওই ডোবায় ফেলে পালিয়ে যান তিনি। হত্যায় ব্যবহৃত অপর রামদাটি হাতে করে নিয়ে যান এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি নয়ন বন্ড।

রিফাত ফরাজীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানের নেতৃত্বে রামদাটি উদ্ধার করা হয়। মো. শাহজাহান বলেন, রিফাত ফরাজী ৭ দিনের রিমান্ডে আছেন। আজ সকালে তাঁকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে যায় পুলিশ। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী একটি রামদা উদ্ধার করা হয়।

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১২ আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশ সূত্র জানায়, এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এজাহারভুক্ত আসামি রিফাত ফরাজী, চন্দন, হাসান, অলিউল্লাহ ও টিকটক হৃদয় গ্রেপ্তার হয়েছেন। এজাহারভুক্ত বাকি ছয়জন এখনো গ্রেপ্তার হননি। তাঁরা হলেন রিশান ফরাজী, মুসা বন্ড, রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম ও রায়হান।

এজাহারভুক্ত আসামি ছাড়াও সন্দেহভাজন হিসেবে সিসিটিভি ফুটেজ শনাক্ত করে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন কামরুল হাসান, সাগর, তানভীর, রাফিউল ইসলাম রাব্বি ও নাজমুল ইসলাম। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ছয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই ছয়জন হলেন সাগর, চন্দন, মো. হাসান, অলিউল্লাহ ও তানভীর হাসান।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গত শনিবার পাওয়া একটি নতুন ভিডিও ফুটেজ থেকে তাঁরা আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। ওই ফুটেজে দেখা যায়, গত ২৬ জুন হত্যাকাণ্ডের সময় নিহত রিফাত শরীফকে বরগুনা সরকারি কলেজ গেট থেকে ধরে কিল-ঘুষি মারতে মারতে পূর্ব দিকে নিয়ে যাচ্ছিল একদল তরুণ। এই ভিডিও ফুটেজে আরও একজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাকে মামলার আসামি করা হয়নি। ব্যাগ কাঁধে থাকা ওই তরুণ রিফাত শরীফকে কলেজের মূল ফটক থেকে ধরে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর কাছে মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

আজ সোমবার সকালে রিফাত হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আরিয়ান শ্রাবণ নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ন কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গত ২৬ জুন সকালে স্ত্রী আয়েশাকে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে আনতে যান রিফাত শরীফ। এ সময় কলেজের মূল ফটকের সামনে থেকে ধরে নিয়ে কোপানো হয় তাঁকে। স্থানীয় লোকজন রিফাতকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ওই দিন দুপুরে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম বাদী হয়ে ২৭ জুন বরগুনা থানায় ১২ জনের নামে একটি হত্যা মামলা করেন।