কাজ না করেই টিআরের বরাদ্দ আত্মসাৎ
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কমরপাড়া জামে মসজিদের বারান্দা নির্মাণের জন্য গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পে ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে টাকা তোলাও হয়েছে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই প্রকল্পের কোনো কাজ করা হয়নি। অথচ ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল।
জানতে চাইলে ওই প্রকল্পের চেয়ারম্যান ছকিমুদ্দিন বলেন, ‘মোর সই জাল করি হামার ওয়ার্ডের মেম্বার মোর্শেদা টাকা তুলি নিছে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যানোকও বিচার দিছুন। কিন্তু এলাং টাকা উদ্ধার করি দেয়নি। টাকা না পাইলে মুই কাম করিম কী দিয়্যা।’
এ বিষয়ে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য মোর্শেদা বেগম বলেন, ‘ভাই, টাকা তুলছি তা কী হইছে? আত্মসাৎ তো করি নাই। আগোত টাকা দিইনি, এখন দেব। আমি টাকা না তুললে ফেরত যেত।’
একই ইউনিয়নের দক্ষিণ হাজীপুর মেনানগর খেয়ানপাড়া দুর্গামন্দির সংস্কারের জন্য বরাদ্দ করা ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা প্রকল্পের চেয়ারম্যান রায় কিশোর তুলে নিয়েছেন। তিনিও কাজ করেননি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দাদা, বরাদ্দ পাইতে কিছু টাকা খরচ হইচে। এখন ১৫ হাজার টাকা আছে। সাত দিনের মধ্যে এ টাকার কাজ করব।’
টিআরের ওই দুটি প্রকল্পের মতো তারাগঞ্জ উপজেলায় রাস্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, মসজিদ, মন্দিরসহ নানা অবকাঠামো সংস্কারের নামে বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ করা অর্থ তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ আবদুল মমিন বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে সব প্রকল্পে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এখন সব প্রকল্প ঘুরব। কাজ না হলে প্রকল্প চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
গ্রাম আদালতের জন্য আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পুরোনো ভবন সংস্কার করতে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজটি যথাযথভাবে করা হয়েছে—এমন ভাউচার দিয়ে পুরো টাকা তুলে নিয়েছেন প্রকল্পটির চেয়ারম্যান।
জানতে চাইলে ওই প্রকল্পের সভাপতি বাদশা আলম বলেন, ‘ভাই, টাকা আত্মসাৎ করিনি। জমা আছে। সমস্যার কারণে এত দিন কাজ করিনি। এখন করব।’
আলমপুর ইউপির অ্যাম্বুলেন্স রাখার ঘর তৈরির জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজ শেষ করা হয়েছে দেখিয়ে এ টাকা তোলা হয়েছে। জানতে চাইলে এ প্রকল্পের চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রকল্প চেয়ারম্যান হলেও কাজ করবেন ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদের। উনি এখনো কেন কাজ শুরু করেননি, জানি না।’
এ ব্যাপারে মঞ্জুর কাদের বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা অতটা অর্থলোভী না। দুই-চার দিনের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।’
কাঁচনা তেলিপাড়া জামে মসজিদের চালা নির্মাণের জন্য সাড়ে ৪৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ কাজও করা হয়নি। জানতে চাইলে এ প্রকল্পের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য তহির উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘এখন ব্যস্ত আছি। পরে কথা হবে। কিছু টাকা আমার কাছে আছে। কয়েক দিনের মধ্যে কাজ করে দেব।’
পিআইওর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পূর্ব পলাশবাড়ি দুর্গামন্দিরে গ্রিল ও টাইলস লাগানোর জন্য ৮৩ হাজার ৪০০ ও দোলাপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা সংস্কারের জন্য ৬০ হাজার টাকা, ইমামগঞ্জ জামে মসজিদ, সালাবানাপাড়া কদতলী থেকে আফজাল মাস্টারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা ও আলমপুর ঘোনাপাড়া জামে মসজিদ সংস্কারের জন্য ৪৪ হাজার করে টাকা এবং দোহাজারী ফকিরপাড়া জামে মসজিদ, ইমামগঞ্জ কবরস্থান, ভীমপুর হাজীপাড়া কবরস্থান, তারাগঞ্জ মৎস্যচাষি সমবায় সমিতির কার্যালয়, পোদ্দারপাড়া জামে মসজিদ সংস্কার ও বাছুরবান্দা শ্মশানে মাটি ভরাটের জন্য সাড়ে ৪৩ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত এসব প্রকল্পের কাজ করা হয়নি।
এসব প্রকল্পের চেয়ারম্যানরা জানান, তাঁরা ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করবেন।
পিআইওর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে তারাগঞ্জে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে সাধারণ ৭২টি প্রকল্পের বিপরীতে ৪৫ লাখ ২৪ হাজার ৬৭০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিশেষ ৫৭টি প্রকল্পের বিপরীতে দেওয়া হয় ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ৬৮০ টাকা।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবু তাহের মো. আকতারুজ্জামান বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের কাজ দেখে বরাদ্দ ছাড় দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া আছে। প্রতিটি প্রকল্পের কাজ এখন বুঝে নেওয়া হবে। কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেলে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।