গাজীপুরের সেন্ট নিকোলাস চার্চ
বহু বহু বছরের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গির্জাটি। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী এলাকায় ১৬৬৩ সালে সেন্ট নিকোলাস চার্চটি স্থাপন করা হয়। আমাদের ইতিহাসের বড় কিছু ঘটনা ঘটেছে এই গির্জাকে কেন্দ্র করে। এখান থেকে কালীগঞ্জের আঞ্চলিক বাংলা ভাষার প্রথম বাইবেল অনূদিত হয়। এমনকি বাংলা ভাষার প্রথম দ্বিভাষিক অভিধান ও প্রথম ছাপা বইও এখান থেকেই প্রকাশিত হয়।
ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে পর্তুগিজ খ্রিষ্টানরা আস্তানা ফেলে এখানে এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের অনুমতিক্রমে ১৬৬৪ সালে তারা প্রথম গির্জা স্থাপন করে। পরে ১৬৮০ সালে পাকা ইমারত হয় নাগরীর সেন্ট নিকোলাস চার্চ। পর্তুগিজ স্থাপত্য নিদর্শনে তৈরি দর্শনীয় সেন্ট নিকোলাস চার্চ ও সাধু আন্তনির গির্জা নাগরীকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকেরা আসছেন এই গির্জা দেখতে।
দেয়ালে খোদিত সময়কাল বলছে, এটি আনুমানিক ১৬৬৩ সালে নির্মিত হয়েছে। অন্যদিকে নতুন নির্মাণ তারিখ হিসেবে সেখানকার দেয়ালে লেখা ১৮৮৮ সাল। এরপরে বেশ বড় আকারে আরেকটি গির্জা ভবন তৈরি করা হয়। ভবনের সামনে স্থাপন করা হয়েছে হস্ত প্রসারিত যিশুর দণ্ডায়মান একটি মূর্তি।
নতুন করে নির্মাণের পর বর্তমান সুদৃশ্য গির্জাটি দেখে অনেকে অবাক হতে পারেন। এত পুরোনো গির্জা, অথচ মনে হচ্ছে বর্তমান সময়ের আধুনিক একটি নির্মাণশৈলী।
গির্জাটির স্থাপত্য পরিকল্পনায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বারান্দাযুক্ত প্রবেশপথ। সমবেত উপাসনার জন্য কক্ষ এবং বেদি ও একান্ত প্রার্থনাকক্ষ। তবে সেন্ট নিকোলাস চার্চে চিরাচরিত নার্দেক্সের পরিবর্তে বাংলাঘরের অনুকরণে চারটি মজবুত খুঁটির ওপর সমতল ছাদযুক্ত একটি বারান্দা তৈরি করা হয়েছে। এটা ইউরোপীয় গির্জা স্থাপত্যের দেশি চরিত্র হিসেবেও ধরা যেতে পারে। এই গির্জা বিদেশিদের আদলে করা হলেও এর নির্মাতারা ছিলেন দেশি। এর বারান্দা দিয়ে তিনটি দরজা রয়েছে। প্রতিটি দিয়েই হলঘরে যাওয়া সম্ভব। লোহার ১২টি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে একতলা গির্জা ভবনটি।
এই গির্জাকে কেন্দ্র করে ১৯১০ সালে পর্তুগিজ পুরোহিত ও তৎকালীন জেলা বোর্ডের সামান্য অনুদানে প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু হয়। এরপর ১৯২০ সালে ১ সেপ্টেম্বর নিম্নমাধ্যমিক ইংরেজি বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ।