পৃষ্ঠপোষকদের না ধরলে আরও বন্ড তৈরি হবে

নয়ন বন্ড
নয়ন বন্ড

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে যখন সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডের গুলিবিদ্ধ লাশ আনা হয়, তখন সকাল সাড়ে আটটা। সাতসকালেই লাশ দেখতে ভিড় করেছিলেন হাজার দেড়েক মানুষ। অনেকে বলছিলেন, এখানেই কি বন্ডদের শেষ? যারা এসব বন্ডকে তৈরি করে, তাদের কিছু না হলে তো কয়দিন পর আবারও এ রকম সন্ত্রাসীর সৃষ্টি হবে।

নয়নের পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের কেউ কেউ এখন তাঁর মৃত্যুতে উল্লাস প্রকাশ করছেন বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। লাশ দেখতে আসা বরগুনা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফারুক সিকদার বলেন, নয়নের বিচরণক্ষেত্র ছিল পৌর এলাকার ৯ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড। নয়ন বন্ড তো শেষ। এখন সবার প্রত্যাশা, যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় নয়ন বন্ড তৈরি হয়েছে, সেই লোকগুলোও যেন আইনের আওতায় আসে। নইলে আবারও নয়ন বন্ড তৈরি হবে।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম বলেন, এই সন্ত্রাসীদের যারা সৃস্টি করেছে, ব্যবহার করেছে, সেই পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন এ ঘটনার (রিফাত হত্যা মামলার) সব আসামিকে গ্রেপ্তারে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। এসব বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’

স্থানীয় লোকজন বলছেন, নয়ন বন্ড হিসেবে সাব্বির আহম্মেদের উত্থান খুব বেশি দিনের নয়। বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের সঙ্গে থাকতেন সাব্বির। ২০১৩ সালে এইচএসসি পাসের পর নয়ন মাদক সেবন, ছিনতাই, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৭ সালের দিকে স্থানীয় এক প্রভাবশালীর পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে মাদক ব্যবসা, চোরাই পথে মোটরসাইকেলের ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৭ সালে হেরোইন, ইয়াবাসহ ধরা পড়েন তিনি। প্রায় দুই মাস কারাগারে থেকে বের হওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ফেসবুকে এলাকার কিছু
কিশোর তরুণকে যুক্ত করে গড়ে তোলেন ‘007’ নামে ফেসবুক গ্রুপ।

>

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হওয়ার পর তাঁর পৃষ্ঠপোষকদের বিচার দাবি এলাকাবাসীর।

২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল বরগুনা প্রেসক্লাবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান ও সাধারণ সম্পাদক তানবীর হোসাইন সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথের মাদক ব্যবসার সহযোগী নয়ন বন্ড। সুনাম দেবনাথের সঙ্গে নয়নের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জেলার রাজনৈতিক মহলে প্রচার আছে।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সুনাম বলেন, ‘এটা তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রতিপক্ষরা এসব অপপ্রচার করছে।’ নয়ন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর গতকাল বেলা ১১টার দিকে সুনাম ফেসবুকে লেখেন, ‘আহা কি শান্তি! দিস ইস কল জাস্টিজ’।