কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়ালেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে আমরণ অনশনসহ সব ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা। সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে ‘খুব তাড়াতাড়ি’ তাঁদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
চার দফা দাবিতে এক মাসেরও বেশি সময় অবস্থান কর্মসূচির পর গত শুক্রবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরণ অনশন শুরু করেন ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতা-কর্মীরা। অনশনের চতুর্থ দিনে সোমবার (১ জুলাই) রাত পৌনে আটটায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পক্ষ থেকে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে তাঁদের অনশন ভাঙান দলের কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি।
আটটার দিকে জুস ও পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙানোর পর সোয়া আটটার দিকে তাঁদের নিয়ে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান। ওবায়দুল কাদেরের সেখানে থাকার কথা থাকলেও ব্যক্তিগত কারণে তিনি ছিলেন না। তবে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন এবং মারুফা আক্তার পপির সঙ্গে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক হয়।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পদবঞ্চিতদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে পদবঞ্চিতদের মুখপাত্র ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আশ্বস্ত হয়ে আমরা আমাদের সব ধরনের কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।’
পদবঞ্চিতদের চার দফা দাবি হলো আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ, পদ শূন্য ঘোষিত ছাত্রলীগের কমিটির ১৯ জনসহ সব ‘বিতর্কিত নেতার পদ ও নাম প্রকাশ, বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে পদবঞ্চিতদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে কমিটিতে পদায়ন এবং মধুর ক্যানটিনে (১৩ মে) ও টিএসসিতে (১৯ মে) তাঁদের ওপর হামলার সুষ্ঠু বিচার ৷
‘যা যা ঘটেছে’
সংকটের শুরু গত ১৩ মে। ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি প্রকাশের প্রায় ১০ মাস পর সেদিন ঘোষণা করা হয় সংগঠনের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কমিটি করতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। কমিটি ঘোষণার দিন সন্ধ্যায় কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে কয়েকজন নারী নেত্রীসহ ১০-১২ জন আহত হন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেদিন রাতে আহতদের দেখতে হাসপাতালে গেলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী পদবঞ্চিতদের তোপের মুখে পড়ে ফিরে যান। পরদিন সকালে সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ারা। এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে অনশন ও সংগঠন থেকে গণপদত্যাগের মতো কর্মসূচির হুমকিও দেন তাঁরা।
এর পরদিন দুপুরে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গণভবনে ডেকে ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন রাতেই সংবাদ সম্মেলন করে অভিযুক্তদের বহিষ্কারে ২৪ ঘণ্টা সময় নেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সেখানে বিতর্কিত ১৬ জনের নামও প্রকাশ করেন তাঁরা। তার পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটিতে থাকা ‘বিতর্কিত’ ও ‘অযোগ্য’ ৯৯ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেন পদবঞ্চিতরা।
১৯ মে টিএসসিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের হাতে ফের মারধরের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেন পদবঞ্চিতরা। এক দিনের মাথায় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আশ্বাসে তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ান। পরের দিন মধুর ক্যানটিনের ঘটনায় ৫ জনকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। বহিষ্কৃত হওয়ার দুঃখে সেদিন রাতেই পদবঞ্চিত পক্ষে থাকা ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য জারিন দিয়া ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
এরপর ২৬ মে রাতে নবগঠিত কমিটির সবাইকে নিয়ে পরদিন ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ। সেদিন দিবাগত রাত থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত টানা অবস্থানে ছিলেন পদবঞ্চিতরা। এর মধ্যে ২৮ মে দিবাগত রাতে কমিটির বিতর্কিত ১৯ জনের পদ শূন্য ঘোষণা করেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে যাঁদের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তাঁদের নাম এখনো ঘোষণা করা হয়নি। ছাত্রলীগ বলেছে, পারিবারিক ও সামাজিক দিক বিবেচনায় তাঁদের নাম প্রকাশ করা হবে না।