এলাকাবাসীর সচেতনতায় থামল ট্রেন
রেলসেতুটির ওপর পাঁচ দিন আগে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল উপবন এক্সপ্রেস। লাইনচ্যুত ট্রেনটির একটি বগি এখনো পড়ে আছে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর নিচে। তখন সেখানে তেমন পানি ছিল না। কিন্তু দুই দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে এখন ডুবুডুবু অবস্থা, কুলকুল করে বইছে স্রোত। পরিস্থিতি দেখে ভালো ঠেকেনি এলাকাবাসীর। এই অবস্থায় সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন গেলে আবার ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। সেই আশঙ্কায় গতকাল শুক্রবার দুপুরে একটি ট্রেন আটকে দেয় মানুষ।
তবে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচাল এলাকার মানুষের সেই আশঙ্কা শেষ পর্যন্ত সত্য হয়নি। রেলওয়ের প্রকৌশলীরা সেতুটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়ে দেন, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ট্রেন চলতে পারে। প্রকৌশলীদের এই সিদ্ধান্তে প্রায় তিন ঘণ্টা পর এই পথে আবারও ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর উপবন এক্সপ্রেস গত ২৩ জুন বরমচাল রেলস্টেশন এলাকার বড়ছড়া রেলসেতুর ওপর দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে ট্রেনের পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর মধ্যে একটি বগি বড়ছড়া সেতুর নিচে পড়ে। এ দুর্ঘটনায় ট্রেনের চার যাত্রী নিহত হন। আহত শতাধিক।
রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্র বলেছে, দুর্ঘটনায় সেতুর নিচে পড়ে যাওয়া বগিটি গতকাল পর্যন্ত অপসারণ করা হয়নি। এদিকে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বড়ছড়ায় পানি বেড়ে ওই বগির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে স্থানীয়দের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়, ওই বগির কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেতুর গার্ডারে পানির ধাক্কা লেগে এর নিচের মাটি সরে যেতে পারে। এতে সেতুটি ঝুঁকিতে থাকতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই তাঁরা গতকাল দুপুরে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বরমচাল স্টেশনে আটকে দেন। তাঁরা বড়ছড়া সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন না চালানোর অনুরোধ করেন। পরে স্টেশনমাস্টার ও চালক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ট্রেনটি স্টেশনেই আটকে রাখে।
রেলওয়ে সূত্র বলেছে, বড়ছড়া রেলসেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন সিলেটের মাইজগাঁও এবং চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী জালালাবাদ মেইল এক্সপ্রেস ট্রেন কুলাউড়া জংশন স্টেশনে আটকা পড়ে।
বরমচাল রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার সফিকুল ইসলাম সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এলাকাবাসীর আপত্তিতে ট্রেন আটকে রাখা হয়েছিল। পরে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের লোকজন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেতুটি ঝুঁকিমুক্ত বলে জানান। বিকেল ৪টা ৫৩ মিনিটে পাহাড়িকা ও ৫টা ৭ মিনিটে পারাবত ট্রেন সেতুটি অতিক্রম করে গন্তব্যে চলে যায়।
বড়ছড়া রেলসেতু এলাকা দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা রেলওয়ের কুলাউড়া সেকশনের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য) জুয়েল আহমদ বলেন, সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার কারণে বড়ছড়া সেতু নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মনে আশঙ্কা ছিল। তার ওপর সেতুর নিচে পানি বেড়ে গেছে। এ কারণে তাঁরা গতকাল ট্রেন আটকে দেন। তবে সেতুটি ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে।