২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

পুরুষের তুলনায় নারীরা ১০৯৫ দিন বেশি বাঁচে

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)

বাংলাদেশের মানুষের মোট গড় আয়ু ৭২ বছর ৩ মাস হয়েছে। নারীর গড় আয়ু যেখানে ৭৩ বছর ৮ মাস, আর পুরুষের গড় আয়ু ৭০ বছর ৮ মাস। অর্থাৎ, নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে তিন বছর বা ১ হাজার ৯৫ দিন বেশি বাঁচে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রতিবছর ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসন ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে মানুষের গড় বয়সসহ ১৬টি গণমিতিক সূচক প্রকাশ করে। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনের মিলনায়তনে ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ খাবার পানি পাচ্ছে। মোট জনসংখ্যার ৯০ দশমিক ১ শতাংশ এখন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। ৭৮ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ স্যানিটারি সুবিধার আওতায় এলেও উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করছে ২ শতাংশ তথা প্রায় ৩৩ লাখের বেশি মানুষ।

প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন এসেছে মানুষের জীবনমানেও। তাই বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের পরিসংখ্যানে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন দেখা যাচ্ছে। বিদ্যুতের ব্যবহার, প্রজনন ক্ষেত্রসহ বিভিন্ন সূচকে দেশ এগোচ্ছে।

চলতি বছরের প্রথম দিনের হিসেব অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে ৮ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার পুরুষ এবং ৮ কোটি ২৭ লাখ হচ্ছেন নারী। দেশের মানুষের সাক্ষরতার হার বেড়েছে এবং নারীর তুলনায় পুরুষের সাক্ষরতার হার বেশি। ২০১৮ সালে সাক্ষরতার হার ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০১৭ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ। এদিকে পুরুষের সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা নারীর ক্ষেত্রে ৭১ দশমিক ২ শতাংশ।

বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিককালে পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রথম বিবাহের গড় বয়স কিছুটা নিম্নমুখী। পুরুষদের বিয়ের বয়স ২০১৫ সালে ছিল ২৫ বছর ৩ মাস যা ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কমে যথাক্রমে ২৫ দশমিক ১ বছর ও ২৪ বছর ৪ মাসে দাঁড়ায়। এদিকে ২০১৪ সালে নারীদের বিয়ের গড় বয়স ছিল ১৮ বছর ৩ মাস, যা ২০১৮ তে হয়েছে ১৮ বছর ৬ মাস।

এই প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘পরিবারে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। ২০১৪ সালে যেখানে নারীপ্রধান পরিবারের হার ছিল ১২ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৮তে তা হয়েছে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। নারী প্রধান পরিবারের এই হারে উন্নত দেশেও এভাবে পরিবর্তন হয় না।’

বিবিএসের এই জরিপটি দেশের পল্লি ও শহরাঞ্চলের ২০১২টি নমুনা এলাকার ১২ লাখ ৫৯ হাজার ৭৪৪ জনের ওপর জরিপ চালিয়ে এই প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। এতে প্রজনন, মরণশীলতা, বিয়ের বয়স, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার, প্রতিবন্ধী হার, সাক্ষরতাসহ ১৬টি সূচকের হার বের করা হয়। জরিপে চন্দ্র সেকরণ ও ডেমিং এর দ্বৈত পদ্ধতি অনুসরণ করে তথ্য সংগ্রহ এবং পরে তা সঠিকতা যাচাই করে জনমিতিক সূচকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা পাচ্ছে। তারই ফল হচ্ছে গড় আয়ু বৃদ্ধি।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শিশুমৃত্যুর সূচকে ভালো করছে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে ১ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুহার যেখানে ছিল প্রতি হাজারে ৩০ টি, সেখানে ২০১৮ সালে তা কমে এসেছে হাজারে ২২ টি। নারীদের চেয়ে পুরুষেরাই বেশি হারে প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে আছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা কমেছে। ২০১৪ সালে প্রতি হাজারে যেখানে ৯ জন প্রতিবন্ধী ছিল তা ২০১৮ তে কমে ৮ দশমিক ৫ জনে এসেছে। তবে নারীদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে প্রতিবন্ধীর হার বেশি। ২০১৮ সালে পুরুষ প্রতিবন্ধীর হার প্রতি হাজারে ৯ দশমিক ৮ জন এবং নারী প্রতিবন্ধীর হার ৭ দশমিক ৭ জন।

বিবিএসের এই প্রতিবেদনটি প্রতিবছর ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় হয়ে থাকে। এর প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল হক প্রতিবেদনটির ফলাফল অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে দুইটি জনশুমারির মধ্যবর্তী সময়ে জনসংখ্যা ও গণমিতিক তথ্য পেতে জরিপটি করে। এ প্রকল্পের মাধ্যমেই সারা বছরই তথ্য নেওয়া হয়। সকল তথ্য সংগ্রহ করেন নারীরা।

অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক কৃষ্ণা গায়েন।