ঈদের সালামি: ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পদবঞ্চিতদের ভিন্ন কথা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়াদের ঈদের সালামি দেওয়া-নেওয়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, ঈদের আগে তিনি সংগঠনের পদবঞ্চিত অংশের ৩০ জনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ঈদের সালামি দিয়েছেন। অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা সবাইকে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে সালামি দেওয়া হয়েছে। রাব্বানীর এ বক্তব্যকে ‘আংশিক সত্য’ আর টাকার অঙ্ককে ‘মিথ্যাচার’ বলছেন পদবঞ্চিতরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা (পদবঞ্চিত) এখানে কেন বসে আছে, আমাদের জানা নেই। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি এবং আমার সভাপতি (রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন) একাধিকবার তাঁদের কাছে গিয়েছি, তাঁদের সঙ্গে ইফতার করেছি। এমনকি ঈদের আগের দিনও গিয়ে তাঁদের অনুরোধ করেছি, আপার (প্রধানমন্ত্রী) দাওয়াত ও শুভেচ্ছা কার্ড পৌঁছে দিয়েছি, আপার পক্ষ থেকে ঈদের সালামিটাও তাঁদের দিয়ে এসেছি।’এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন গিয়েছিলাম, তখন রাজু ভাস্কর্যে (অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা পদবঞ্চিত) ৩০ জন ছিল। ৩০ জনের সবাইকে আমি সালামি দিয়ে এসেছি। সিনিয়রদের ৫ হাজার টাকা আর একটু জুনিয়রদের ৪ হাজার টাকা করে সালামি দিয়ে এসেছি।’
তবে পদবঞ্চিত অংশ রাব্বানীর এই দাবিকে ‘আংশিক সত্য’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ৭-৮ জনকে ‘জোর করে’ সালামি দিয়ে গেছেন তিনি। আর রাব্বানীর দাবিকৃত টাকার অঙ্ককে তাঁরা ‘মিথ্যাচার’ বলে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদবঞ্চিত অংশের মুখপাত্র ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কেউ তাঁদের কাছ থেকে সালামি নিতে চায়নি। ঈদের আগে তাঁরা (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) জোর করে ৭-৮ জনকে সালামি ও শুভেচ্ছা কার্ড দিয়ে গেছেন।’ ৫ হাজার ও ৪ হাজার টাকা করে সালামি দেওয়ার যে দাবি রাব্বানী করেছেন, তাঁকে ‘মিথ্যাচার’ হিসেবে আখ্যা দেন রাকিব। তিনি বলেন, ‘কাউকে দুই হাজার কাউকে তিন হাজার টাকা করে দিয়ে গেছেন তাঁরা।’
রাকিব অভিযোগ করে বলেন, ‘তাঁরা (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেটি ঘটনা সুরাহা করার জন্য নয়, এসেছিলেন আমাদের আন্দোলন নিয়ে রাজনীতি করার জন্য৷ এই বিষয়টির অপব্যবহার করবেন তাঁরা, সব জায়গায় বলবেন আমরা তো দেখা করেছি৷’
ঈদের আগের দিন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সংগঠনের কমিটিতে পদবঞ্চিত ওই অংশটির সঙ্গে দেখা করে ঈদের পর সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে বলেন। পদবঞ্চিতদের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে কমিটি থেকে সব ‘বিতর্কিত’কে বাদ দেওয়া এবং যে ১৯ জনের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের নাম প্রকাশের দাবি জানানো হয়৷
এ বিষয়ে রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কেউই বিতর্কের ঊর্ধ্বে নই৷ কিন্তু দেখতে হবে, সেই বিতর্কটা দলীয় গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী কি না, পদ শূন্য হওয়ার মতো কি না৷ আমরা অলরেডি ১৯ জনের পদ শূন্য ঘোষণা করেছি, এ রকম আরও থাকলে তাও দেখা হবে৷’
গত ২৬ মে দিবাগত রাত একটা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দ্বিতীয় দফায় অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছিল ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া অংশ৷ ধারাবাহিক ঘোষণার অংশ হিসেবে ওই অংশের সদস্যরা গতকাল বুধবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনটিও সেখানেই কাটিয়েছেন। গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে তাঁরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। এখনো তাঁরা অবস্থানে রয়েছেন।