২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বগুড়ায় ঈদ উপলক্ষে নেই বিআরটিসির 'স্পেশাল সার্ভিস'

বিআরটিসি
বিআরটিসি

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) বগুড়া ডিপোতে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ বাসের (স্পেশাল সার্ভিস) কোনো বরাদ্দ নেই। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, দেশজুড়ে বিআরটিসির বড় বড় ডিপোতে ঈদ উপলক্ষে স্পেশাল সার্ভিসের বাস নামানো হলেও কয়েক বছর ধরেই বগুড়া ডিপো বঞ্চিত। ডিপো থেকে চলাচলকারী বিভিন্ন রুটের বাসে দিন দিন যাত্রীসংখ্যা বাড়লেও নেই ন্যূনতম যাত্রীসেবা।

বিআরটিসি বগুড়া ডিপোর উপমহাব্যবস্থাপক মফিজ উদ্দিন বলেছেন, ঈদ উপলক্ষে বাসের বরাদ্দ নেই। তাই স্পেশাল সার্ভিস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বগুড়া ডিপো থেকে বিআরটিসির চলাচলকারী ৬৫টি বাসের একটিও ফিটনেস সনদ নেই। ৫৫টি বাস ৩৩ বছরের পুরোনো লক্কড়ঝক্কড়। এর মধ্যে ৩২টি বাস কোনোরকমে জোড়াতালি দিয়ে চললেও ২৩টি চলাচল অযোগ্য হয়ে ডিপোতে পড়ে রয়েছে। আর ১২টি বাস বিআরটিসির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ইজারা দেওয়া রয়েছে। বাকি দুটি বাস বহরে যুক্ত হয়েছে সম্প্রতি। পুরোনো বাস প্রায়ই মাঝরাস্তায় বিকল হয়ে পড়ছে। বর্ষাকালে বাসের ছাদ চুয়ে পড়া পানিতে কাকভেজা হচ্ছেন যাত্রীরা। যাত্রীসংখ্যার তুলনায় বাসের সংখ্যাও অপ্রতুল।

বিআরটিসি বগুড়া ডিপো সূত্রে জানা গেছে, ‘বর্তমানে যাত্রীসংখ্যার তুলনায় এ ডিপোতে বাসসংকট রয়েছে। বিভিন্ন যাত্রাপথে বাসের চাহিদা বর্তমানে প্রায় ১০০টি। অথচ ৩২টি বাস দিয়ে চলছে বিআরটিসির যাত্রীসেবা।’
বিআরটিসি বগুড়া ডিপো সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া ডিপো থেকে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশালসহ সারা দেশের প্রায় ৩৫টি রুটে একসময় বিআরটিসির ৬৭টি বাস চলাচল করত। এর মধ্যে ৫৭টি বাস ১৯৮৬-৮৭ সালে বরাদ্দ দেওয়া। ২৭ বছর পর ২০১৩ সালে ডিপোতে নতুন করে আরও ১০টি বাস বরাদ্দ মেলে। ডিপোর নিয়ন্ত্রণাধীন মোট ৬৭টি বাসের মধ্যে ২৩টি চলাচল অযোগ্য হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে ডিপোতে পড়ে রয়েছে। অবশিষ্ট ৪৪টি বাসের মধ্যে ১২টি বাস বিআরটিসির প্রধান কার্যালয় থেকে দীর্ঘমেয়াদি ইজারা দেওয়া রয়েছে। এখন ডিপোর নিয়ন্ত্রণে থাকা ৩২টি বাসের মধ্যে সিংহভাগই লক্কড়ঝক্কড়। কিছুদিন আগে নতুন দুটি বাসের বরাদ্দ দেওয়া হলেও পুরোনো দুটি বাস প্রত্যাহার করে দীর্ঘমেয়াদি ইজরা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩২টি বাসে কোনোরকমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে যাত্রীসেবা। বাসসংকটের কারণে বগুড়া-ঢাকা, বগুড়া-চট্টগ্রাম, বগুড়া-সিলেট, বগুড়া-বরিশাল, বগুড়া-গাইবান্ধাসহ ১৬টি রুটে বিআরটিসির বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ১৯টি রুটে সীমিত বাস চলাচল করছে।

বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, ডিপোর অন্যতম লাভজনক রুট বগুড়া-জয়পুরহাট। এই রুটে প্রতিদিন ছয়টি করে বাস চলাচল করে। কিন্তু সব বাসই ৩৩ বছরের পুরো লক্কড়ঝক্কড়। পুরোনো এসব বাস প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে থাকে। মাঝরাস্তায় বিকল হয়ে পড়ছে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলে বাসের ছাদ চুয়ে পানি পড়ে আসন ভিজে যাচ্ছে। যাত্রীসংখ্যার অনুপাতে এই রুটে আরও অন্তত আরও আটটি বাস সংযোজন করা প্রয়োজন।

বগুড়া-জয়পুরহাট রুটে বাসের নিয়মিত যাত্রী এস এম কাওছার রহমান বলেন, ‘সময় বাঁচানোর জন্য নিয়মিত বিআরটিসি বাসে যাতায়াত করি। কিন্তু সীমিত বাস চলাচল করার কারণে কাঙ্ক্ষিত সময়ে কোনো বাস পাওয়া যায় না। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বগুড়া থেকে গন্তব্যে মাত্র ছয়টি বাস ছাড়লেও এসব বাসে ন্যূনতম সেবা নেই। আসন ভাঙা, জং ধরা। বাসের বডি জং ধরা। ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে।’

বিআরটিসি বগুড়া ডিপোর উপমহাব্যবস্থাপক মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন,‘বগুড়া ডিপো থেকে বর্তমানে ১৯ রুটে ৩২টি বাস চলাচল করছে। ১২টি বাস দীর্ঘমেয়াদি ইজারা দেওয়া রয়েছে। বাসসংকটের কারণে বগুড়া-ঢাকা, বগুড়া-চট্টগ্রাম, বগুড়া-সিলেটসহ অনেক রুট বন্ধ করে দিতে হয়েছে। যাত্রীসংখ্যা অনুযায়ী ন্যূনতম বহরে ৭০টি বাস দরকার।

বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীসেবার মান বাড়াতে কয়েক বছর আগে বহরে যুক্ত হয়েছিল দোতলা বাস। কিন্তু বগুড়ার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চাপে তা বন্ধ করে দিতে হয়। একই কারণে বগুড়া-ঢাকা, বগুড়া-চট্টগ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ রুটে বিআরটিসির বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।